দেহকে সুস্থ, সবল রাখতে নিয়ম-কানুন মেনে চলার পাশাপাশি আরেকটা জিনিসের দিকে খেয়াল রাখা উচিৎ। আর সেই জিনিসটি হল খাদ্য। আর সকল উপকারী খাদ্যের মধ্যে অন্যতম একটি খাদ্য হল টক দই। ভিটামিন, আমিষ, মিনারেল ইত্যাদির মতো নানা উপকারী উপাদান রয়েছে এই টক দইয়ে।
পাশাপাশি দুধের মতোই পুষ্টিগুণ থাকায় দুধের বিকল্প হিসেবেও দারুণ এক সমাধান এবং অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য হল এই দই। আজ আমরা এর নানা উপকারিতা, পুষ্টি গুণ এসব বিষয়ে আলোচনা করবো বা জানবো।
টক দই কেন খাবেন? (টক দই এর পুষ্টিগুণ)
নিয়মিত টক দই খেলে নানা প্রকার উপকার পাওয়া যায়। এতে রয়েছে বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া যারা দেহের উপকার করে। এছাড়াও রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-৬, ভিটামিন-বি১২, ফসফরাস ইত্যাদির মতো উপাদান।
এ সকল উপাদান নানাবিধ উপকার করে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন এই দই খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। তাছাড়া যারা দুধ খেলে সমস্যার সম্মুখীন হন তাদের জন্য এই দই হতে পারে একটি দারুণ সমাধান। এটি দুধের অভাব পূরণ করে এবং সহজে হজমও হয়। তাই প্রতিদিন এই দই খেতে পারেন।
টক দই এর উপকারিতা
দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি খাবার হল টক দই। এটি খাওয়ার উপকার পাওয়া যায় সাথে সাথেই। দেহের নানাবিধ উপকারে লাগে এই দই। নিচে এর উপকারিতা সম্পর্কে এবার আলোচনা করা যাক।
ক) হাঁড় ও দাঁত

প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় এই খাদ্য দেহের হাঁড়ের গঠনে সহায়তা করে ও হাঁড় মজবুত করে। তাই নিয়মিত খেতে পারেন এটি।
এতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁতকেও শক্ত ও মজবুত করে।
খ) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
এতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারকে মেরে দেহকে সুস্থ রাখে।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টক দই খুবই কার্যকর। নিয়মিত এটি খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
এতে থাকা ল্যাকটিক এসিড ডায়রিয়া প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর।
এই খাবার দেহে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ জমতে দেয় না। দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে শরীরকে সুস্থ রাখে ও বার্ধক্যও প্রতিরোধ করে।
গ) কোষ্ঠকাঠিন্য
টক দইয়ে থাকা ল্যাকটিক এসিড কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এই দই নিজেও সহজে হজম হয়, পাশাপাশি এই খাবার মানুষের হজমশক্তিও বাড়াতে সাহায্য করে।
কোলন ক্যান্সারের রোগীরা টক দই খেতে পারেন৷ এতে উপকার পাবেন।
যাদের দুধ খেতে সমস্যা হয় বা দুধ হজমে সমস্যা হয় তারা চাইলে এই দই খেতে পারেন। কারণ এতে থাকা আমিষ দুধের আমিষের চেয়ে সহজে হজম হয়। তাই এই দই খেলে দুধের পুষ্টিও পাবেন আবার হজমও হবে দ্রুত ও সহজেই। দুধের বিকল্প হিসেবে তাই খেতে পারেন এই খাবার।
ঘ) ওজন কমাতে
ওজন কমাতে একটি কার্যকর উপাদান হতে পারে টক দই। এটি খেলে এতে থাকা আমিষের কারণে পেট ভরা থাকে দীর্ঘ সময়। ফলে অন্য কোনো খাবার খেতে ইচ্ছা হয় না। আর অন্য খাবার না খাওয়ার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ঙ) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই দই খুবই উপকারী। প্রতিদিন এক কাপ টক দই খেলে উচ্চ রক্তচাপ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়। এই দই উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রেখে দেহের উপকার করে।
এছাড়াও, ডায়াবেটিসের রোগীরা এই খাবার খেলে এ থেকে উপকার পাবেন। ডায়াবেটিসের পাশাপাশি হৃদরোগের ক্ষেত্রেও এই দই খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়তে পারেনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
টক দই খাওয়ার নিয়ম
টক দেহের জন্য উপকারী এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি। কিন্তু কখন বা কিভাবে খেলে উপকার পাওয়া যায়?
টক দই মূলত দুপুরের খাবারের পর খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যায়৷ তখন এ থেকে দেহ পুরো পুষ্টি পায়। তবে যখনই খাওয়া হোক না কেন দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রামের বেশি এই খাবার খাওয়া উচিৎ নয়। চাইলে বোরহানি বা শরবত বানিয়ে এই দই খাওয়া যায়। আবার খালিও খাওয়া যায়। খালি খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে এই দই খাওয়া যায়। যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন এ থেকে উপকারিতা অবশ্যই পাবেন।
আরও জানতে চাইঃ
ক) গর্ভাবস্থায় টক দই খাওয়া যায়?
অনেকে ভাবেন গর্ভাবস্থায় টক দই খাওয়া যায় না বা অনেকে গর্ভবতী মা কে দই খেতে দেন না। কিন্তু জানেন কি গর্ভবস্থায় টক দই বা দই খাওয়ার রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। এই দই মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্যই ভালো
মা ও শিশুর শারীরিক সুস্থতায় দই খুবই উপকারী একটি খাদ্য। পাশাপাশি অন্য কোনো দুগ্ধজাত খাদ্যের চেয়ে দই এর পুষ্টি উপাদান ও চাহিদা পূরণের হারও বেশি। মিষ্টি দই খেলে এসিড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এই দই গর্ভবতী মায়ের হজমশক্তি বাড়ায়। এর ফলে নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীর ঠান্ডা রাখে ইত্যাদি সহ আরও অনেক উপকার করে। তাই গর্ভাবস্থায় এ দই খাওয়া যায়। এতে কোনো ক্ষতি নেই বরং উপকার আছে।
খ) টক দই দিয়ে কি কি খাওয়া যায়?
টক দই খাওয়া যায় বিভিন্ন জিনিসের সাথে মিশিয়ে। সালাদের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন এই দই। বিভিন্ন সালাদ যেমন টমেটো, গাজর, শশা এসবের সাথে বিট লবণ মিশিয়ে সাথে টক দই দিয়ে খাওয়া যায়। চাইলে এত গোলমরিচও দিতে পারেন।
আবার বোরহানি হিসেবেও টক দইয়ের সাথে বিট লবন, গোল মরিচ গুঁড়া, পুদিনা বাটা ইত্যাদি মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়া যায়৷ এটি বেশ জনপ্রিয় একটি পানীয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়েও এই দই খাওয়া যায়। পাশাপাশি অনেকে বিভিন্ন তরকারী রান্নায়ও এই দই ব্যবহার করে থাকেন। এতে তরকারীর স্বাদ ও পুষ্টি উভয়েই বেড়ে যায়।
গ) রাতে টক দই খেলে কি হয়?
রাতে টক দই খেলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে হজমের সমস্যা থাকলে চিনি মিশিয়ে খাওয়া উচিৎ রাতে। এছাড়া যাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা আছে তারা রাতের বেলা এই দই এড়িয়ে চলা উচিৎ।
কারণ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে সন্ধ্যার পর থেকে দই খেলে গলায় মিউকাস জমা হতে থাকে। এতে করে ঠান্ডা লাগতে পারে। ফলে সর্দি, কাশি কিংবা গলাব্যথার মতো সমস্যার দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা ছাড়া রাতে এই দই খাওয়ার তেমন কোনো সমস্যা বা ক্ষতি নেই। তাই চাইলে রাতেও খেতে পারেন এই খাবার।
টক দই এর অপকারিতা
টক দই আর আসলে সেরকম কোনো অপকারিতা বা ক্ষতি নেই। এ থেকে উপকারিতাই পাওয়া যায় প্রায় সব ক্ষেত্রে। তবে এর সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে এ থেকে পুরো উপকার পাওয়া যায় না।
এছাড়াও যাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা আছে তারা রাতের বেলা না খাওয়া ভালো। কারণ রাতে খেলে এতে করে সহজেই ঠান্ডা লেগে যায়। তাই এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
পরিশেষে-
টক দই একটি অতি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় খাবার। এর তেমন কোনো ক্ষতি নেই। টকের কারণে অনেকে এটি সরাসরি খেতে চান না। তবে টকের কথা না ভেবে এটি খাওয়া উচিৎ।
এটি খেলে আমাদের দেহ বিশেষভাবে উপকৃত হবে। প্রতিদিন এক কাপ টক দই দুধের চেয়ে বেশি পুষ্টি জোগায় দেহে। এই খাবার খেলে তেমন কোনো ক্ষতি না থাকায় এবং সহজেই হজম যোগ্য একটি খাবার হওয়ায় নিয়মিত খেতে পারেন এটি। আজ থেকেই তাই শুরু করে দিন এই খাবার খাওয়া।
I want to purchase 10. Kv. Mango