চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে? হিপোক্রেটিস? চলুন জেনে নেই


চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে? হিপোক্রেটিস? চলুন জেনে নেই। হিপোক্রেটিস কে বলা হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক, কারন তিনিই ছিলেন প্রথম চিকিৎসক, চিকিৎসাবিদ্যাকে যিনি ধর্ম এবং কুসংস্কারের বাইরে গিয়ে যৌক্তিক উপায়ে অনুশীলন করেছিলেন।

চিত্রঃ হিপোক্রেটিস পারস্য রাজা আরটাক্সেরেক্স এর দেয়া উপঢৌকন পায়ে ঠেলে ফেলছেন । Artist ঃ Anne-Louis Girodet de Roussy-Trioson

হিপোক্রেটিস কেন চিকিৎসাবিদ্যার জনক?

আনুমানিক ৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এশিয়া মাইনরের “কস” দ্বীপে (বর্তমানে যেখানে তুরস্ক) হিপোক্রেটিস এর জন্ম। তার পিতা ছিলেন একজন পুরহিত চিকিৎসক।

এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, তৎকালীন চিকিৎসা শাস্ত্র কিন্ত বর্তমান সময়ের মত ছিলনা, তখনকার সময়ের চিকিৎসা শাস্ত্র অনেকটাই যাদুবিদ্যা, কুসংস্কার এবং আদিভৌতিক ভ্রান্ত ধারনার উপর দাঁড়িয়ে ছিল।

হিপোক্রেটিস সর্ব প্রথম এই ধ্যান ধারনার বাইরে গিয়ে, যুক্তি এবং উপসর্গ বিশ্লেষণের মাধ্যমে-রোগ যাচাই এবং তদানুজায়ি পথ্য এবং চিকিৎসা করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন । বিজ্ঞান নির্ভর এই চিকিৎসাবিদ্যা প্রণয়ন করার জন্য তাকে বলা হয় চিকিৎসাবিদ্যার জনক।

হিপোক্রেটিস এর রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

হিপোক্রেটিস এর ফোর হিউমর তত্ত্ব

হিপোক্রেটিস যখন চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে অনুশীলন শুরু করেন , তখন একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাশাস্ত্রের বিদ্যাপীঠ ছিল নিডিয়ান বিদ্যালয় গুলো (Cnidian school)। নিডিয়ান মতানুসারে মানবদেহ মূলত আলাদা স্বতন্ত্র অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমষ্টি, অর্থাৎ এক প্রত্যঙ্গের সমস্যা কখনো পুরো দেহের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে না। সুতরাং শুধুমাত্র ঐ অঙ্গের চিকিৎসা করলেই যথেষ্ট।

অপরদিকে, তাদের রোগ নির্ণয় পদ্ধতিও সন্দেহাতীত ভাবেই ছিল ভুল। কেননা, রোগীর বাহ্যিক এবং দৃশ্যমান (subjective) উপসর্গ গুলকেই একমাত্র বিবেচনা করা হত। অপরদিকে অন্তর্নিহিত (objective signs) উপসর্গ গুলকে বরাবরই অগ্রাহ্য করা হত ।

হিপোক্রেটিস সবসময় নিডিয়ান এই ধারনার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তার মতে মানব শরীরকে সবসময় একটি একক গঠন (one unified organism, or physis) হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ।

সুতরাং এর যে কোন অংশ আক্রান্ত হলে তার ফলাফল অবশ্যম্ভাবী ভাবেই পুরো শরীরে পড়তে পারে। সুতরাং প্রতিটি অঙ্গকে অবিচ্ছিন্ন এবং নির্ভরশীল এই বিবেচনা করে চিকিৎসা এবং পথ্য প্রদান করা উচিত।

এছাড়া তিনি “ফোর হিউমর“ তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন । চারটি উপাদানের ভারসাম্য এর ওপর সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে। যথা blood (রক্ত), phlegm (শ্লেষ্মা), yellow bile(হলুদ পাচক রস ), এবং black bile (কালো পিত্তরস)। তিনি মনে করতেন, এই চারটি উপাদানের সুষম অনুপাত বজায় আছে কিনা, যেকোনো রোগীর ক্ষেত্রে তা সর্ব প্রথম খুঁজে দেখতে হবে এবং তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে ।

সার্জারির কিছু কার্যকর পদ্ধতি বা টেকনিক উদ্ভাবন

একথা ঠিক আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে, প্রযুক্তির সহায়তা  ছাড়া একজনের পক্ষে মানব্ দেহের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাওয়া একবারেই অসম্ভব। সুতরাং একথা বলাই বাহুল্য যে,  হিপোক্রেটিস ও তার ব্যাতিক্রম নন । মানব দেহের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে অপ্রতুল ধারনা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তিনি অনেক সার্জারির কিছু কার্যকর পদ্ধতি বা টেকনিক উদ্ভাবন করেছিলেন, যা উনবিংশ শতাব্দীর কিছুকাল আগেও অনেক চিকিৎসক অনুসরন করতেন, উদাহরণস্বরূপ– ”হিপডিস্প্লেস্মেন্ট” এবং ”লক’জ” এর কথা বলতেই হয় ।

হিপোক্রেটিস তার সময়ের চিকিৎসকদের সময়ের চাইতে এগিয়ে ছিলেন, তার চিকিৎসার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল রোগীর শারীরিক কষ্ট এবং সক্ষমতা সবার আগে বিবেচনা করা, এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান ।

রোগ সমূহকে তাদের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস সর্বপ্রথম তিনিই  করেন, এছাড়া রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইটীওলোজী এবং প্যাথলজি এর শৃঙ্খলা নিয়ে আসেন ।

এছাড়া তিনি, সবসময় তার রোগীদের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সুষম খাবার, ডায়েট, খেলাধুলা, ব্যায়াম, সমুদ্রস্নান, হাইড্রথেরাপি, মেসাজ ইত্যাদি পথ্য দিয়ে থাকতেন, যা আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা অনুযায়ী খুবই বিজ্ঞান সম্মত ।

হিপোক্রেটিস ছিলেন একজন আদর্শ চিকিৎসক। একাধারে জ্ঞানী, সৎ, আধুনিক মনা অন্যদিকে সেবা এবং রোগীর উপশম ছিল তার একমাত্র ব্রত। তার বিখ্যাত শপথ “হিপোক্রেটিস ওথ“ এখনো অনেক চিকিৎসকের অনুপ্রেরণা।

তথ্যসূত্র –

আরও পড়তে পারেনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.