কোন পাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন? পাশ পরিবর্তন করবেন কীভাবে?


বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭৪ শতাংশ কোন না কোন দিকে কাত হয়ে ঘুমায়। কিন্তু আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী আপনি কোন পাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন সেটাই আজ আমাদের আলোচনার বিষয়।

আপনার ঘুমের অবস্থান আপনার সামগ্রিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। আপনার বয়স এবং শরীরের ধরণ অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট ঘুমানোর অবস্থান সুস্থতার জন্য জরুরি।

কেন কাত হয়ে ঘুমানো উচিত?

কাত হয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য জরুরি। কিন্তু কোন পাশে কাত হয়ে ঘুমানো উচিত? আপনার কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা দুই দিকেই ঘুমানোর কিছু সুবিধা খুঁজে পেয়েছেন।

তবে, এই টিপসগুলো আপনাকে ডাক্তারের দেওয়া পরামর্শের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ঘুমানোর ক্ষেত্রে ডাক্তার যদি আপনাকে কোন পরামর্শ দিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেগুলো মেনে চলুন।

যাদের বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো উচিতঃ

যাদের ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমানো উচিতঃ

  • হার্টের সমস্যা রয়েছে এমন ব্যাক্তি

বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানোর সুবিধাসমুহ

বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো যাদের জন্য উপকারী। আসুন বিষয়গুলো একটু গভীরভাবে আলোচনা করি :

১. গর্ভবতী মায়েদের

বেশিরভাগ ডাক্তাররা মনে করেন যে, গর্ভবতী মায়েদের বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো উচিত। কারণ,এই ঘুমের অবস্থানে হৃদপিন্ড ভালভাবে রক্ত পাম্প করে এবং লিভারের উপর চাপ কমায়। প্রকৃতপক্ষে, আপনি যখন আপনার নবজাতকের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছেন তখন আপনাকে অনেক বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

কোন পাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন

২. যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছেঃ

যারা এসিডিটি সমস্যায় ভোগছেন, তাদের জন্য খাবার খাওয়ার ঠিক পরে শুয়ে পড়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। পেটের আকৃতি এবং খাদ্যনালীর সাথে এর সংযোগ কোণের কারণে, চিত হয়ে বিশ্রাম নেওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এই অবস্থায় ভাল ফলাফলের জন্য, বিশেষজ্ঞগণ আপনাকে বাম দিকে কাত হয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, এটি খাদ্যনালীতে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসৃতির পরিমাণ সীমিত  করে।

৩. যারা নাক ডাকেঃ

আপনি যখন চিত হয়ে ঘুমান, তখন আপনার অনুনাসিক পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে ফলে নাক ডাকার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি আপনি বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমান তাহলে আপনার শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সহজ হয়। আপনি যদি আপনার ডান কাত হয়ে ঘুমান তাহলেও আপনি স্বস্তি পেতে পারেন, তবে বিশেষজ্ঞগণ বিশ্বাস করেন যে আপনার বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো বেশি কার্যকর। ডাক্তারগণ , স্লিপ অ্যাপনিয়ায় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বাম কাত হয়ে ঘুমানোর জন্য পরামর্শ দেন।

৪. যাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে

যেহেতু রক্তনালী শরীরের ডান দিকে অবস্থিত, ডাক্তাররা বিশ্বাস করেন যে, বাম দিকে ঘুমালে রক্তনালীর উপর চাপ কমবে এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য উপকারী হবে।

৫. যাদের হজম সমস্যা রয়েছে

আপনি যখন চিত হয়ে ঘুমান, তখন গ্যাস দ্রুত আপনার পরিপাকতন্ত্র থেকে বের হতে পারে না। আপনি যদি প্রায়ই পেট ফোলা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা অনুভব করেন তবে আপনার বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো উচিৎ।কারণ এভাবে ঘুমালে, অভিকর্ষ বল পাকস্থলীর বর্জ্যকে ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে বৃহদান্ত্রে যেতে সাহায্য করে।

ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমানোর সুবিধাঃ

যেহতু আমাদের শরীর প্রতিসম নয়, তাই বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো সকলের জন্য সঠিক নয়। কিছু শ্রেণীর মানুষ ডান দিকে কাত হয়ে বিশ্রাম নিলে উপকৃত হতে পারেন।

১. যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছেঃ

২০০৩ সালের একটা অনুসন্ধানে দেখা গেছে যারা ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমায় তাদের হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাও কম থাকে। কারণ, এইভাবে ঘুমন্ত ব্যক্তি হ্রদপিন্ডের উপর তুলনামূলক কম চাপ অনুভব করেন। তাই যারা ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমায় তাদের রক্তচাপ ও হার্টবিট স্বাভাবিক থাকে।

কোন পাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন

তবে মনে রাখা উচিৎ যে বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালেও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে ব্যক্তিগত পরামর্শ এবং তথ্যের জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কীভাবে আপনি ঘুমের পাশ পরিবর্তন করবেন?

এখন যেহেতু আপনি পাশ ঘুমের সুবিধাগুলি জানেন। অতএব, আপনার বর্তমান ঘুমের অবস্থান পরিবর্তনের প্রয়োজন হতেই পারে। নতুন একটি অভ্যাস তৈরি করা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। ঘুমের অবস্থান পরিবর্তনে নিচের পরামর্শগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে।

১. অতিরিক্ত বালিশের ব্যবহারঃ

ঘুমের অবস্থান পরিবর্তনের এটিই সবচেয়ে সহজ উপায়। ঘুমানোর সময় অন্য একটি বালিশ বা কোল বালিশ আপনার পিছনে শরীর ঘেঁষে রেখে দিন। তাহলে ঘুমন্ত অবস্থায় আপনি যখন পাশ ফিরতে চাইবেন তখন এই বালিশটি আপনাকে বাঁধা দিবে এবং আস্তে আস্তে পাশ পরিবর্তন হয়ে যাবে।   

২. টেনিস বলের ব্যবহারঃ

যদি আপনার চিত হয়ে শোয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে এই পদ্ধতি আপনার অনেক উপকার করতে পারে। একটি টেনিস বল আপনার জামায় পিছন দিকে পিঠ বরাবর আটকে দিতে পারেন।  ফলে ঘুমন্ত অবস্থায় যখনই আপনি চিত হয়ে শোয়ার চেষ্টা করবেন তখন বলটির কারণে অস্বস্থি অনুভব করবেন এবং স্বস্থির জন্য আবার পাশ ফিরবেন।

৩. বালিশ পরিবর্তন করুনঃ

আপনার যদি সবসময় চিত বা উপুর হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার বালিশের উচ্চতা আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। পাশ কাত হয়ে ঘুমানো ব্যক্তিদের বালিশ এমন হতে হবে যেন আপনার ঘাড় ও মেরুদন্ডের অবস্থান সঠিক ও স্বাভাবিক থাকে।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর

এরপরও যদি আপনি কোন দিকে শোয়া উচিৎ সেই বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে থাকেন তাহলে আমাদের সাধারণ প্রশ্নোত্তরগুলো পড়তে পারেন।   

১. কাত হয়ে শোয়ার ভাল দিকগুলি কি কি?

কাত হয়ে শোয়ার অনেকগুলো ভাল দিক রয়েছে। বিশেষ করে যাদের এসিডিটি, ব্যাক পেইন , হজম সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য উপরকারী। যারা ঘুমন্ত অবস্থায় নাক ডাকেন তাদের জন্যও কাত হয়ে শোয়া বিশেষ উপকারী।

২. গর্ভবতী মায়েদের কোন পাশে ফিরে শোয়া উচিৎ?

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ গর্ভবতী মায়েদের বাম দিকে ফিরে শোয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ, এইভাবে ঘুমালে বা বিশ্রাম নিলে লিভারের উপর চাপ কমে এবং হৃদপিণ্ডও অধিক কার্যকর থাকে। গর্ভবতী অবস্থায় ডান পাশ ফিরে শোয়া অস্বস্থির কারণ হতে পারে।

পরিশেষে –

ডান ও বাম দুই পাশই কাত হয়ে শোয়ার জন্য উপকারী। তবে নির্দিষ্ট কিছু কারণে যেকোন এক পাশ কারো জন্য অধিক উপকারী হতে পারে। যেমন যাদের স্লিপ এপনিয়া, হজম সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বাম দিকে পাশ ফিরে শোয়া অধিক উপকারী। আবার যাদের হৃদরোগ এবং ব্যাক পেইন জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ডান পাশ ফিরে শোয়া অধিক উপকারী। তবে আপনার যদি একাধিক সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র –

আরও পড়তে পারেনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.