ঘরোয়া উপয়ে চিরতরে বিদায় নিবে এলার্জি


এলার্জি কি?

বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, ফুলের রেণু, বিভিন্ন ঔষধ, ধুলাবালি ইত্যাদির মাধ্যমেই মূলত এলার্জি হয়ে থাকে। এলার্জি এক ধরনের প্রদাহ। এলার্জি শব্দটি মূলত দুটি গ্রিক শব্দ Allos ও Ergos এর সমন্বয়ে গঠিত। মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম কোনো কারণে ব্যর্থ হলেই মূলত এলার্জির প্রকাশ ঘটে। চলুন জেনে নেই এলার্জি দূর করার উপায়।

অনেকের জন্য এটি খুবই দুর্বিষহ এক রোগ। এলার্জি বিভিন্ন ধরনের খাবার, যেমন: গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, বেগুন, ইলিশ মাছ ইত্যাদি থেকেই ছড়ায়। তবে এছাড়াও ধুলাবালি বা অন্য কোনো কারণে এটি হতে পারে। এতে সাধারণত মানুষের শরীরে চাকার মতো লাল দাগ হয়। এবং মারাত্মক চুলকানি শুরু হয় সারা দেহে।

 শরীরের এলার্জির প্রতিক্রিয়া
শরীরের এলার্জির প্রতিক্রিয়া

কেন এলার্জি হয়?

এলার্জি কেন হয় সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই অজ্ঞ। ধুলাবালির কারণেই মূলত শরীরে এলার্জির সৃষ্টি হয়। ধুলাবালিতে মাইট নামের এক ধরনের জীবাণু থাকে যা এলার্জি সৃষ্টির জন্য শতকরা ৬০% দায়ী।

তাছাড়া একধরনের ছত্রাক আছে যারা এলার্জির সৃষ্টি করে। আর এ ছত্রাক দ্বারা দূষিত খাদ্য এলার্জির সৃষ্টি করে। তাছাড়াও পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ থেকেও এলার্জি হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ ধরণের ঔষধ গ্রহণ করা উচিৎ নয়।

এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় কী?

এলার্জি একটি মারাত্মক রোগ। এটি মানুষের দেহে প্রচন্ড অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তাই এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই জরুরী। প্রাকৃতিকভাবেই বিভিন্ন উপায়ে এলার্জি দূর করা যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক প্রাকৃতিক ভাবে কি উপায়ে এলার্জি দূর করা যায়:

এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
এলার্জি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
  • বায়োফ্ল্যাভনয়েড নামে ফেনলের এক ধরনের যৌগ যা শাকসবজি ও ফলমূলে প্রাকৃতিক ভাবে থাকে। আর বায়োফ্ল্যাভনয়েড এলাার্জির বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর।
  • কোয়েরসেটিন নামে রাসায়নিক উপাদান এলার্জি দূর করতে কাজে লাগে। এটি গাছের ছাল ও ফলের খোসায় মূলত পাওয়া যায়।
  • ব্রোমেলিন নামক রাসায়নিক শরীরে এলার্জি দূর করতে ভূমিকা রাখে। এটি আনারস থেকে পাওয়া যায়।
  • ভিটামিন সি জাতীয় বিভিন্ন খাবার যেমন: লেবু, কাঁচামরিচ ইত্যাদির মাধ্যমেও এলার্জি প্রতিরোধ হয়।
  • ভিটামিন এ জাতীয় খাবারও এলার্জি প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
  • কুঁচিলা নামক গাছে স্টিকনিন, ব্রুসিনসহ বিভিন্ন মূল্যবান উপাদান পাওয়া যায় এলার্জি রোধে কাজ করে।
  • এছাড়াও শুকনো নিমপাতা গুঁড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

মুখের এলার্জি দূর করার উপায় কী?

মুখ আমাদের শরীরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অঙ্গ। মুখকে এলার্জি মুক্ত রাখা জরুরী। আর মুখের এলার্জি চুলকানো ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এতে মুখে লাল লাল দাগ হতে পারে। তাহলে কি মুখের এলার্জি দূর করার উপায় কি? চলুন জেনে নিই মুখের এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকটি উপায়:

  • মুখে এলার্জি হলে মুখে বরফ লাগাতে পারেন, এতে চুলকানি থেকে মুক্তি মিলবে, পাশাপাশি এলার্জি থেকেও কিছুটা নিস্তার পাওয়া যাবে।
  • ভিটামিন সি জাতীয় খাবার প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ।
  • নিমপাতার রস মুখে ব্যবহার করলে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত মেকআপ থেকে মুখে এলার্জি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত মেকআপ পরিহার করা উচিৎ।  এতে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
  • এছাড়াও নিয়মিত গোসল করা ও সানক্রিম ব্যবহার করা উচিৎ।

মাথার এলার্জি দূর করার উপায় কী?

এলার্জি হতে পারে মাথায়ও। এর ফলে মাথায় প্রবল চুলকানির সৃষ্টি হয়। তবে মাথার এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় দেখে নেওয়া যাক:

  • মাথায় নিয়মিত তেল ব্যবহার করলে মাথার এলার্জি ও চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
  • নিয়মিত বালিশ, চিরুনি পরিষ্কার রাখলে মাথায় এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
  • মাথায় অ্যালোভেরার জেল দিলে এলার্জি দূর হতে পারে।
  • মাথায় নিয়মিত নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল দিলে তা থেকে ভালো ফল মিলে।
  • কোনো হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে জেনে ব্যবহার করা উচিৎ। কারণ বিভিন্ন ধরনের এর থেকে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

চোখের এলার্জি দূর করার উপায় কী?

আমাদের দেহের অন্যতম সংবেদনশীল অঙ্গ হল চোখ। কিন্তু এই চোখেই যদি এলার্জির সংক্রমণ হয় তখন কি হবে? চোখে এলার্জি হলে তা প্রচন্ড যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। চোখ আমরা চাইলেও সহজে চুলকাতে পারি না। এছাড়াও চোখ ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়। চোখের এলার্জি দূর করার উপায়:

  • শুধু এলার্জি নয়, চোখের যেকোনো সংক্রমণে সবচেয়ে উপকারী ওষুধ হচ্ছে পানি। চোখে প্রচুর পরিমাণে পানি দিলে এলার্জির সমস্যা দূর হবে।
  • চোখের এলার্জিতে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে গোলাপ জল। চোখে গোলাপ জল দিলে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • এক গ্লাস পানিতে ৩ চামচ পরিমাণ লবণ মেশাতে হবে। এরপর ভালো করে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। এ পানি দিয়ে চোখের চারপাশ মুছে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

তাছাড়া, বাইরে বের হওয়ার সময় চোখে সানগ্লাস পড়ে থাকা ভালো। এতে ধুলাবালি থেকে মুক্ত থাকা যায়। ধুলাবালি এলার্জিসহ অন্যান্য রোগের একটি অন্যতম কারণ।

নাকের এলার্জি দূর করার উপায়:

নাকেও হতে পারে এলার্জি। সময়মতো চিকিৎসা না করালে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। নাকের এলার্জি দূর করার জন্য ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা উচিৎ।

  • ঘর পরিষ্কার রাখা উচিৎ। কারণ অনেক সময় ঘরের ধুলাবালি থেকেই নাকের এলার্জি ছড়ায়। তাই এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিৎ।
  • নাকের এলার্জি থেকে মুক্তির জন্য ভ্যাকসিন চিকিৎসাকেই সবচেয়ে কার্যকর মনে করে উন্নত বিশ্বের চিকিৎসকরা। তবে বাংলাদেশে এ চিকিৎসা নেই।
  • এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ‘স্টেরয়েড’ সেবন করা যেতে পারে। তবে স্টেরয়েড দেহের জন্য ক্ষতিকর।
  • বাইরে বের হলে যতটা সম্ভব মাস্ক ব্যবহার করা ভালো।

নাকের এলার্জির তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তাই সতর্কতা অবলম্বনই হতে পারে এ রোগ থেকে দূরে থাকার সবচেয়ে সেরা উপায়।

এলার্জি ও চুলকানি কি একই বিষয়?

এলার্জি আর চুলকানি একই বিষয় না। এলার্জি হলে চুলকানি হয় এটা ঠিক, তবে চুলকানি ছাড়াও এলার্জি হলে চাকার মতো লাল লাল দাগ হয় শরীরে।

অপরদিকে শুধু এলার্জি নয় অন্য অনেক কারণেও চুলকানি হতে পারে।

  • শরীরে বিভিন্ন ধরনের দাদ রোগ বা খোস-পাঁচড়ার কারণে দেহে চুলকানি হতে পারে।
  • ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হলে চুলকানি হতে পারে যা একজিমা নামে পরিচিত।
  • কখনো কখনো ব্রণ হলে ওই ব্রণের আশেপাশে চুলকানি হতে পারে।
  • এছাড়া চুলকানির অন্যতম বড় একটি কারণ হলো গরমের দিনে ঘামাচি হওয়া। ঘামাচি হলে দেহে ছোট ছোট ফুসকুড়ি হয় যা থেকে চুলকানির সৃষ্টি হয়।
  • এছাড়া বিভিন্ন পোকামাকড়ের কামড়েও দেহে চুলকানির দেখা দিতে পারে।

অর্থাৎ, বলা যায় এলার্জি হলে চুলকানি হলেও এলার্জি এবং চুলকানি এক জিনিস নয়।

পরিশেষেঃ

বোঝাই যাচ্ছে যে, এলার্জি একটি মারাত্মক অস্বস্তিকর রোগ। যা সহজে নিরাময়যোগ্য নয়। তাই এলার্জি থেকে রক্ষা পেতে ঘরে ধুলাবালি জমতে দেওয়া উচিৎ নয়। বাইরে বের হলে ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। এবং ঘরে ফিরে সঠিক উপায়ে পরিচ্ছন্ন হওয়া দরকার। এছাড়াও এলার্জি জাতীয় খাবার ও ঔষধ সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা কাম্য।

তথ্যসুত্রঃ

আরও পড়তে পারেনঃ

4 Replies to “ঘরোয়া উপয়ে চিরতরে বিদায় নিবে এলার্জি”

  1. যে কোন এলারজি থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, ২/৩ মাস এ আশা করি মুক্তি পাবেন।
    ০১৯৮৯ ৯৮৩৬৮০

  2. আমার শরীরে এক ধরনের এলার্জি আছে। সেটা হলো শীতকালে যখন শরীর গরম হয় তখন চুলকানো শুরু করে এবং মুহুর্তের মধ্যে সারা শরীরে ঘামাচির মতো হয়ে যায়। ৩০/৪০ সেকেন্ড পর আবার সব সাভাবিক হয়ে যায়। তো এর জন্য আমি কি করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.