আখরোট কি? (Walnut in Bengali)
আখরোট হলো এক প্রকার বাদাম। এর ইংরেজি নাম Walnuts. এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আখরোটের তৈলাক্ত বীজকে বাইরের অক্সিজেন থেকে রক্ষা করে। ফলে এটি খাওয়ার উপযোগী থাকে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য বাদাম খাওয়ার উপকারিতা আমরা সবাই জানি, কিন্তু আখরোট খাওয়ার উপকারিতা বা এর পুষ্টি গুণ বেশ বিস্ময়কর। এই বাদাম অন্যান্য বাদাম যেমন চীনাবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি থেকেও অনেক বেশি পুষ্টিকর। এটি একটি অত্যন্ত উপকারী ও পুষ্টিকর বাদামজাতীয় ফল।

আখরোট এর পুষ্টি উপাদানগুলো কি কি?
আখরোটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি। এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকায় সহজেই এটি হালকা খাবার বা জল খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও অধিক পরিমাণে ফাইবার যুক্ত থাকায় এটি একটি বিশেষ উপকারী খাবার।
একটি আখরোটে ৬৫% ফ্যাট এবং ১৫% প্রোটিন থাকে। এছাড়াও থাকে ফাইবার, পটাশিয়াম এবং অল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। আখরোটে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকলেও এই ফ্যাট ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
সাগরের মাছের বিকল্প হিসেবে এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড বেশ কার্যকর। তাই যারা মাছ খেতে পারে না বা খায় না তারা চাইলেই আখরোট দিয়ে মাছের পুষ্টি পূরণ করতে পারেন। এছাড়াও আখরোটে থাকে ১৮৫ মিলিগ্রাম ক্যালোরি ও ১ মিলিগ্রাম সোডিয়াম।
আখরোট এর উপকারিতা:
আখরোট খুবই উপকারী একটি বাদাম বা ফল। এর গুণাগুণ অনেক। ওজন কমানো কিংবা অন্য কোনো রোগের ঔষধ হিসেবেও এটি অত্যন্ত কার্যকর ও উপকারী। চলুন দেখে নিই এর উপকারিতা:
ক) স্মৃতিশক্তি রক্ষায়
স্মৃতিশক্তি রক্ষায় আখরোটের রয়েছে বেশ দারুণ ভূমিকা। আখরোটের মধ্যে থাকে ভিটামিন ‘ই’ ও ফ্লাভনয়েড। আর ভিটামিন ‘ই’ ও ফ্লাভনয়েড রক্তের মধ্যে থাকা ফ্রি র্যাডিক্যাল রাসায়নিক কমাতে কার্যকর।
মূলত এই ফ্রি র্যাডিক্যাল রাসায়নিকই মানুষের স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে। এই রোগের নাম ডিমেনশিয়া। প্রতিদিন আখরোট খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
খ) ত্বকের বলিরেখা দূর করে
বয়সের সাথে সাথে মানুষের ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে থাকে যা ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে। মূলত ফ্রি র্যাডিকেল ড্যামেজের কারণে এই সমস্যা হয়।
আখরোটে থাকা ভিটামিন বি ও কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই ফ্রি র্যাডিকেল ড্যামেজ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ফলে বলিরেখা দূর হয়। আরও পড়তে পারেনঃ রূপচর্চায় জবা ও গোলাপ পাপড়ির ব্যবহার
গ) হৃদযন্ত্রের উপকারে
আখরোটে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। দেহের জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট খুবই জরুরী একটি উপাদান। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাবে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। কিন্তু আখরোটে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকায় আখরোট খেলে হৃদযন্ত্রের উপকার হয়।
ঘ) ওজন ঠিক রাখতে
ওজন ঠিক রাখতে আখরোটের বেশ ভালো ভূমিকা রয়েছে। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ও ফাইবার। ওজন ঠিক রাখতে এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ও ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঙ) শুক্রাণুর মান বৃদ্ধিতে
পুরুষের দেহের শুক্রাণুর মান বাড়াতে এটি একটি কার্যকর উপাদান। শুক্রাণু সন্তান জন্মদানের জন্য মূল উপাদান। তাই এটির মান ও সংখ্যা ভালো থাকা অত্যাবশ্যক।
প্রতিদিন মধুর সাথে মিশিয়ে আখরোট খাওয়া শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য খুবই উপকারী।
আরও পড়তে পারেনঃ মধু খওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
চ) কোলেস্টেরল কমাতে
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকা মানুষের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্ট বা হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে।
কিছু গবেষণায় দেখা যায়, আখরোট খাওয়ার ফলে খুব দ্রুততর সময়ের মধ্যেই দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে যা খুব উপকারী দিক। পাশাপাশি রক্তে থাকা ব্লাড ভেসেলের নমনীয়তাও বৃদ্ধি পায়।
ছ) ভালো ঘুমের জন্য
ভালো ঘুম ঘুমাতে পারলে মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি দেহ সুস্থ ও সবল থাকে। আর এই ভালো ঘুমের জন্য আখরোট একটি উপাদান খাদ্য।
মানুষের ভালো ঘুমের জন্য দরকারী একটি উপাদান হলো মেলাটোনিন। প্রচুর পরিমাণে মেলাটোনিন দেহে থাকলে বেশ ভালো ঘুম হয়। আর আখরোটে প্রচুর পরিমাণ মেলাটোনিন থাকে। তাই ভালো ঘুমের জন্য আখরোট অত্যন্ত কার্যকর।
জ) গর্ভস্থ শিশুর জন্য
মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর জন্যও উপকারী। গর্ভবতী মায়ের ডায়েটে আখরোট খেলে এতে থাকা পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড গর্ভের শিশুর এলার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ঝ) ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
ডায়বেটিস একটি মারাত্মক রোগ। তাই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী। (আরও জানতে পড়তে পারেনঃ ডায়াবেটিস কি এবং ডায়াবেটিস কমানোর উপায়)
আর ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে আখরোট একটি কার্যকর খাদ্যদ্রব্য।
নিয়মিত আখরোট খেলে রক্তে শর্করার মাত্র নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি রক্তে শর্করার মাত্র নিয়ন্ত্রণ করে যা ডায়বেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও এটি সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন খাওয়া ভালো। এতে টাইপ-টু ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
ঞ) স্ট্রেস কমায়
অতিরিক্ত চিন্তা থেকেই মানুষের স্ট্রেস বা উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়। আর এই স্ট্রেস বা উদ্বিগ্নতা কমাতে আখরোটের ভূমিকা অনেক। আখরোটের মধ্যে থাকা ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আলফা লাইনোলেনিক এসিড, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি স্ট্রেস কমাতে বেশ ভালো। তাই আখরোট খেলে স্ট্রেস থেকেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আরও পড়তে পারেনঃ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
ট) চুলের উপকারে
মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হলো চুল। চুলের যত্নে মানুষ অনেক কিছুই করে। তবে এই চুলের উপকারে আখরোটের ভূমিকা অনন্য।
আখরোটে থাকে বায়োটিন বা ভিটামিন বি-৭ । এই বায়োটিন চুল সোজা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুল পড়া বন্ধ করে, চুলের গোঁড়া শক্ত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আরও পড়তে পারেনঃ চুল পড়া রোধে ৫ টি ঘরোয়া সমাধান
আখরোট বাদাম খাওয়ার নিয়ম:

সবচেয়ে কার্যকর সুপারফুডগুলোর মধ্যে সম্ভবত একটি হল আখরোট। এটি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তবে এটি খাওয়ার কি কোনো নিয়ম আছে? উত্তর হল না। আখরোট খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। যেকোনো সময়, যেকোনো ভাবে খাওয়া যেতে পারে এটি।
- বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে, রাতে জলে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেলে উপকার বেশি পাওয়া যেতে পারে৷ তাই সারা রাত ৪-৫ টি আখরোট পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন।
- এছাড়াও দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। মধুর সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
তাছাড়াও ঠান্ডার মধ্যে খেলে এর থেকে দ্বিগুণ উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই শীতের দিনে আখরোট খাওয়া অনেক বেশি উপকারী।
আখরোট কোথায় পাওয়া যায়?
আখরোট খেলে উপকার অনেক ঠিকই কিন্তু এটি পাবো কোথায়? এ উদ্ভিদ বাংলাদেশে তেমন পাওয়া যায় না বা জন্মায় না। প্রাকৃতিক কারণেই এটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় তেমন খাপ খায় না। তাহলে পাবো কিভাবে?
বিভিন্ন বড় শহরের সুপারশপে আখরোট পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটসের প্যাকেটে আখরোট থাকে।
আখরোটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
আখরোট একটি অত্যন্ত উপকারী ও পুষ্টিকর খাবার। এর যেহেতু অনেক উপকারিতা আছে তবে কি এর কোনো অপকারিতা বা ক্ষতিও কি আছে?
আখরোটের সরাসরি কোনো স্বাস্থ্য অপকারিতা বা ক্ষতি নেই৷ তবে কারো যদি বাদামে এলার্জি থাকে তবে সেক্ষেত্রে তার আখরোট খেলে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া আখরোটের তেমন কোনো অপকারিতা নেই।
পরিশেষে –
উপরের আলোচনা কিন্তু এটাই বলে যে, আখরোট অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। এর বিশেষ কোনো ক্ষতি নেই, তবে উপকার অনেক। এমন একটি খাদ্য উপাদান যার কোনো ক্ষতি নেই তা খাওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এটি আমাদের দেহের পুষ্টির অভাবও দূর করে। এতে থাকা পুষ্টি উপদান হৃৎপিন্ড থেকে শুরু করে চুল পর্যন্ত সবকিছুরই উপকার করে।
তাই এটি হতে পারে আমাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণের সহজতম একটি উপাদান। আপনিও চাইলে আজ থেকেই শুরু করতে পারেন আখরোট খাওয়া। এতে আপনার উপকার ভিন্ন ক্ষতি হবে না।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে।
আখরোট বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ
আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রায় খায়, ভালো লাগে 👍
ধন্যবাদ
আখরোট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম ধন্যবাদ।
খুব উপকীরত হলাম আখরোট সম্পর্কে জেনে।
মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Thanks for the important information.
মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আখরোট কোথায় পাওয়া যায়???
এতো লম্বা মেসেজ আমি কখনো পরিনি
পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকী র কথা শুনে
আমি পরো মেসেজটা পরলাম
তবে আখরোট আমি খেতাম খুবি ভালো একটা ফল
মাজে এটা খাওয়া ছেরে দিছিলাম
তবে ইনশাআল্লাহ আজ থেকে আমার খাওয়ার সুরু করবো🥰🥰
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Thank you for the important information
You are welcome. (You can visit our store to buy premium quality walnut)
আখরোট ভিজিয়ে রেখে তার পানি খেলে কি কোন সমস্যা হবে না শুধু ভিজানো হয়ে গেলে নরম আখরোটাই খাবো
ভেজা আখরোট দ্রুত হজম হয়। ভেজা নরম আখরোট খেতে পারেন।
আখরোটের গায়ে লেগে থাকা ছাল সহ খেতে হবে নাকি ছাল ছাড়া
ছাল ছাড়িয়ে খেতে হবে। উন্নত মানের আখরোট পেতে আমাদের স্টোর ভিজিট করতে পারেন – https://store.sasthobidhi.com/product/আখরোট/
আখরোট ভিজিয়ে রেখে পানি সহ খাওয়া লাগবে? না পানি ছাড়া