তুলসী পাতা আমাদের অতি পরিচিত একটি পাতা। খুব সহজেই এই পাতা পাওয়া যায়। বাড়ির আশেপাশে সহজে এর গাছ যেমন লাগানো যায় তেমনি তেমন কোনো যত্ন ছাড়াই এটি বেড়ে উঠে। অযত্নে, অবহেলায় বেড়ে উঠা এই গাছের পাতা আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। এই পাতা অত্যন্ত উপকারী ও ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি পাতা। এই পাতা নানাবিধ রোগের কার্যকর ওষুধ হিসেবে দারুণ কাজ করে। সর্দি, কাশি থেকে শুরু করে নানাবিধ রোগে এই পাতা বেশ কার্যকর।
তুলসী পাতা
তুলসী পাতা একটি ওষধি পাতা। এর রয়েছে নানা উপকারী গুণ। বিভিন্ন রোগে এই পাতা আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। ফুসফুসের রোগ কিংবা সর্দি, কাশি কিংবা আরও বিভিন্ন রোগ ও উপকারে লাগে এই পাতা। বাড়ির পাশে খুব সহজেই এই পাতার গাছ লাগানো যায়। এই গাছে এক ধরনের বীজ থাকে। সেই বীজ থেকে সহজেই এর চারা পাওয়া সম্ভব।
খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না বলে বারান্দায় কিংবা ছাদে যেখানে আলো বাতাস আসে সেখানে এই গাছ লাগানো সম্ভব। অত্যন্ত এই পাতার উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম এসব বিষয় নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করবো।
তুলসী পাতার উপকারিতা
তুলসী পাতা খুবই উপকারী এটি আমারা ইতোমধ্যেই জেনেছি। কিন্তু কি কি উপকার করে এ পাতা? এবার আমরা এই পাতার উপকারিতা গুলো জানবো। আসুন জেনে নিই তুলসী পাতার উপকারিতা কি কি।
- আপনার যদি খাবারে অরুচি দেখা দেয় তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে মুখের রুচি বাড়বে।
- ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি, কাশি হলে আদা কিংবা মধুর সাথে মিশিয়ে তুলসী পাতার রস খেতে পারেন। এতে করে ঠান্ডা, কাশি কমবে। শিশু কিংবা বয়স্ক সকলের জন্যই এটি কার্যকর।
- জ্বর হলে খেতে পারেন এই পাতার রস। এতে জ্বর কমবে দ্রুত।
- গরম পানিতে এই পাতা সেদ্ধ করে খেলে মুখের রোগজীবাণু দূর হয়। পাশাপাশি গলার রোগজীবাণু ও মুখের দুর্গন্ধও দূর হয়।
- তুলসী পাতা দিয়ে এক কাপ চা আপনার মানসিক অবসাদ ও শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত এই পাতা খেলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকে।
- মাথা ব্যথা হলে খেতে পারেন তুলসী পাতার রস। এতে মাথা ব্যথ্য কমবে। পাশাপাশি শরীর ব্যথা হলেও এই পাতার রস কার্যকরী।
- পানিতে তুলসী পাতা ভিজিয়ে রেখে এই পানি দিয়ে নিয়মিত চোখ ধুলে চোখের সমস্যা দূর হয়। তাই চোখের সমস্যা থাকলে নিয়মিত এই পাতা ভেজানো পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন।
- বুকে কফ জমে গেলে নিয়মিত এই পাতার রস খান। এতে বুকে বসা কফ দূর হবে।
- গলাব্যথা কমাতে খেতে পারেন এই পাতার রস। এতে করে গলাব্যথা কমবে।
- এই পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি ও অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এ সকল উপাদান মানসিক চাপ কমাতে অনেক বেশি কার্যকর। তাই আপনার মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত এই পাতা খান। এতে মানসিক সুস্থতা লাভ করবেন। একই সাথে এসব উপাদান আপনার স্নায়ুকে শান্ত রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- বিভিন্ন গবেষণার মতে, অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে তুলসী পাতা খুবই কার্যকর একটি উপাদান।
- এলাচি ও তুলসী পাতা দিয়ে ফুটানো পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই কার্যকর। তাই নিয়মিত এই পানীয় পান করুন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
- কোনো অপারেশন কিংবা কোথাও হাত,পা বা কোনো অঙ্গ কেটে গেলে সেই ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে ক্ষত দ্রুত শুকায়।
- রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তুলসী পাতার রয়েছে দারুণ ভূমিকা। পাশাপাশি এটি রক্তের কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে আপনার ওজন বাড়ার ঝুঁকিও থাকে না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। এই রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান টিউমারের কোষ মেরে ফেলে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
- তুলসী পাতায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেনশিয়াল অয়েলগুলো ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকে বার্ধক্য বা বয়সের ছাপ পড়ে না। পাশাপাশি এই পাতা বেটে লাগালে ত্বক কোমল ও মসৃণ হয়।
- এই পাতায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দেহ থেকে টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে ডিহাইড্রেশন ও কিডনির সমস্যা দূর হয়। পাশাপাশি এটি কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধেও সমান কার্যকর।
- হার্টের উপকারেও এই পাতার রয়েছে বেশ দারুণ ভূমিকা। হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এই পাতা।
- রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দূর করতেও এই পাতার রয়েছে দারুণ ভূমিকা।
- পেট ব্যথার সমস্যায় পানিতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে পানি পান করুন ও পাতা খান। এতে করে পেট ব্যথা কমে যাবে। এছাড়াও পেট খারাপ, গ্যাস্ট্রিক এমনকি আলসারের বিরুদ্ধেও এই পাতা বেশ দারুণ কার্যকর।
তুলসী পাতা ব্যবহারের নিয়ম
তুলসী পাতার অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। এ সকল উপকারিতা তো আমরা জেনে গেছি৷ কিন্তু এই তুলসী পাতা ব্যবহার করবো কিভাবে? কিভাবে খাবো কিংবা ত্বকে যত্নে ব্যবহার করবো? আসুন জেনে নিই তুলসী পাতা ব্যবহারের নিয়ম।
- আদা কিংবা মধু দিয়ে তুলসী পাতার রস খেতে পারেন।
- কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন এই পাতা।
- কুসুম গরম পানিতে এই পাতা ফুটিয়ে সেই পানি খেতে পারেন।
- এই পাতা খেতে পারেন লিকার চা এর সাথেও।
- গরম পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- ফুটন্ত পানিতে তুলসী পাতা দিয়ে সেই গরম পানির ভাপ নিলে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- তুলসী পাতা, নিমপাতা, মুলতানি মাটি, চন্দন, লবঙ্গ ও সামান্য কর্পূর দিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করে তা মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
- কাঁচা হলুদের পেস্ট, তুলসী পাতার রস ও বেসন দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে তা মুখে দিতে পারেন।
- তুলসী পাতার রসের সাথে ঝিঙের রস মিশিয়ে মুখে বা ত্বকে লাগাতে পারেন।
- বেসনের সাথে এই পাতা দিয়ে ফেস প্যাক বানিয়ে মুখে লাগালে ত্বক বা মুখের দাগ দূর হয়।
- হাত ও পা এর কালো দাগ দূর করতে তুলসী পাতার রস, দুধ, ময়দা, কাঁচা হলুদবাটা ও জাফরান একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে তা হাত ও পায়ে লাগান।
তুলসী পাতার গুঁড়া ব্যবহারের নিয়ম
তুলসী পাতা গুঁড়া করেও ব্যবহার করা যায়৷ এই গুঁড়া বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। আবার চাইলে বাসায়ও বানিয়ে নিতে পারেন। এই গুঁড়া ব্যবহারের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই।
কুসুম গরম পানিতে গুলে কিংবা চা এর সাথে মিশিয়ে এই গুঁড়া খেতে পারেন। আবার মধুর সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পেস্ট বানিয়ে এই গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন।
তুলসী পাতার অপকারিতা
তুলসী পাতা উপকারী কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারে এটিও হয়ে উঠতে পারে ক্ষতিকর। আসুন জেনে নিই এর অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকগুলো।
- অতিরিক্ত তুলসী পাতা নারীদের বন্ধাত্ব্যের কারণ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় এই পাতা অতিরিক্ত খেলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে এই পাতা খেলে রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে কোনো অপারেশন বা কোথাও কেটে গেলে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে যা ক্ষতির কারণ।
- এই পাতা বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম যুক্ত হওয়ায় এটি অতিরিক্ত খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে এক সময় রক্তচাপ একদম কমে যেতে পারে, যা আবার ক্ষতির কারণ।
পরিশেষে-
তুলসী পাতার অনেক উপকারিতা হলেও এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিৎ। বেশি পরিমাণে খেলে হিতে বিপরীত হয়। আর এই ওষধি গাছ যেহেতু সহজেই জন্মায় তাই বাড়িতে প্রত্যেকেরই উচিৎ কমপক্ষে একটি হলেও তুলসী গাছ লাগানো। এতে করে হাতের কাছে থাকা এই ওষধি গাছ থেকে নানাবিধ উপকার পাওয়া যাবে যা আমাদেরই লাভ।
তথ্যসূত্রঃ
- https://www.medicalnewstoday.com/articles/266425
- https://www.food.ndtv.com/food-drinks/9-incredible-benefits-of-basil-leaves-you-may-not-have-known-1834742%3famp=1&akamai-rum=off
- https://www.britannica.com/plant/basil
আরও পড়তে পারেনঃ
আপনার পোস্ট পরে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনাকে ধন্যবাদ এমন উপকারী একটা পোস্ট করার জন্য।