এবার করোনা পাওয়া গেল পোষা প্রাণীর দেহে। গত ২৭ মার্চ ২০২০ বেলজিয়ামে এক বিড়ালের দেহে পাওয়া গেল কভিড ১৯ করোনা ভাইরাস। “লিজ” এর ভেটেরেনারি ফ্যাকাল্টির এর একদল গবেষক জানালো করোনা আক্রান্ত এক রোগীর দেহ থেকে এটি ছড়িয়ে পড়েছে তার পোষা প্রাণীটির দেহেও।
একই রকম ঘটনা পাওয়া গেছে হংকং এ , যেখানে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে ২ টি কুকুরের শরীরে। যেখানে করোনা রোগীর সংস্পর্শে থাকা ১৭ টি কুকুর এবং ৮ টি বিড়াল কে পরীক্ষা করে ২ টি কুকুরের শরীরে ভাইরাসটি পরিলক্ষিত হয়।
যদিও আগে ধারনা করা হতো পোষা প্রাণীর মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর কোন ঝুকি নেই, কিন্তু পোষা প্রাণীর সাথে মনিবের আচরণের ক্ষেত্রে অধিকতর সাবধানতা অবলম্বন করার সময় এসে গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই ।
কি বলছেন বেলজিয়াম এর গবেষকরা ?
প্রফেসর স্টিভেন ভ্যান গাউত (Steven Van Gucht) বলেন, “ বিড়ালটির ডাইরিয়া, বমি এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, তখন এর বিস্টা পরীক্ষা করে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।“
পোষা প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ভাইরাস কি ছড়াতে পারে?
যদিও একথা সকলেরই জানা যে , কিছু কিছু বন্য প্রাণী করোনা ভাইরাসের উত্তম বাহক হতে পারে , উদাহরণস্বরূপ বাদুরের নাম সবার আগে আসে । কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO ) সব সময় বলে আসছে কুকুর, বিড়াল বা অন্য কোন পোষা প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের শরীরে কভিড ১৯ ছড়ানোর কোন নজির নেই । প্রফেসর স্টিভেন ও এর সাথে সহমত পোষণ করে বললেন –
”লিজ এর এই ঘটনায় মনিবের শরীর থেকেই তার পোষা বিড়ালটির দেহে ছড়িয়েছে ভাইরাস।”
তিনি আরও বলেন-
“ এ ভাইরাস এর পোষা প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের দেহে ছড়ানোর সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ ।“
এছাড়া বেলজিয়ান প্রাণী সুরক্ষা অধিদপ্তর বলেছে –
“ এই ভাইরাসের পোষক কোন প্রাণী নয় বরং মানুষ , সুতরাং আপনার পোষা প্রাণীকে ছেড়ে যাবার কোন কারন নেই “ ।
আরেকটি প্রশ্ন এখানে থেকে যায় , পোষা প্রাণীটি আক্রান্ত না হয়েও , শরীরের বহির্ভাগ যেমন , পালক অথবা লোমের মাধ্যমে ভাইরাসটি বহন করতে পারে কিনা?
চলুন ভালো করে বুঝে নেয়া যাক বিষয়টি ,করোনা ভাইরাস সচরাচর ছড়িয়ে থাকে ২ উপায়ে, প্রাইমারি ট্রান্সফিউসান বা আক্রান্ত বেক্তির লালা , মিউকাস বা ড্রপলেট থেকে তথা হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে।
অথবা সেকেন্ডারি ট্রান্সফিউসান বা ভাইরাস থাকা কোন জিনিস বা তল (সারফেস) স্পর্শ করে , পরবর্তীতে সেই হাত নিয়মানুযায়ী না ধুয়ে মুখে , চোখে বা নাকে স্পর্শ করলে। গবেষণায় দেখা গেছে মসৃণ বস্তুর পৃষ্ঠতল (যেমন আপনার কিচেনের কাওন্টার টপ , বা মসৃণ দরজার হাতল ) ভাইরাস ছড়ানোর জন্য বেশি উপযোগী । অপরদিকে অমসৃণ এবং (porous) বন্ধুর যে সব জিনিস ( যেমন , আপনার পোষা প্রাণীর লোম ) অপেক্ষাকৃত কম ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে কারন এবড়ো থেবড়ো এবং লোমশ সারফেস এর কারনে শুধু মাত্র স্পর্শের মাধ্যমে আটকে থাকা এসব ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াটা একটু কঠিন হয়ে পরে বইকি।
কিন্তু তারপরেও পোষা প্রাণীর সাথে মনিবের আচরনে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে । যেখানে মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে কোন ভাবেই ভাইরাস পোষা প্রাণীটির দেহে না ছড়ায় এবং প্রাণীটি যাতে ভাইরাসের বাহক হয়ে না যায়।
নিম্নলিখিত সাবধানতা অবলম্বন করে বিপদ এড়িয়ে চলুন খুব সহজেইঃ
১। আপনার পোষা প্রাণী এবং আপনি উভয়ের জন্যই ভালো হয় যদি, খুব কাছাকাছি স্পর্শ (close contact) এড়িয়ে চলুন ।
২। পোষা প্রাণীর পরিচর্যা এবং খাবার দেয়ার পর খুব ভালো করে নিয়মানুযায়ী হাত ধুয়ে ফেলুন ।
৩। অনেক সময় দেখা যায় কুকুর , বিড়াল অথবা অন্য কোন পোষা প্রাণী মনিবের হাত এবং মুখ জিহ্বা দিয়ে স্পর্শ করছে , এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সেই ব্যাপারে সচেষ্ট থাকুন ।
৪। আপনার পোষা প্রাণীটিকে অপরিচিত ও বাইরের কোন মানুষ যাতে স্পর্শ না করে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
৫। অনেকেই পোষা প্রাণীর শরীরে এবং লোমে – নাক ঘসে থাকেন,অথবা মুখ দিয়ে স্পর্শ করে থাকেন, এ ধরনের স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
চলুন এই দুঃসময়ে অতঙ্কিত না হয়ে সাবধান হই, এবং করোনা প্রতিরোধের নিয়মগুলি সকলে মেনে চলি।