শর্করা জাতীয় খাবার অনেকে এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু শর্করাকে এড়ানো খুবই কঠিন। তাছাড়া শর্করা বাদ দিয়ে শরীর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলতে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার কোনগুলো তা জানতে হবে।
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা কি?
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট হল চিনির অণু। বিভিন্ন খাবার এবং পানীয় গ্রহনের সময় আমরা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা গ্রহন করে থাকি।
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা শরীরের কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য শক্তির প্রধান উৎস।
কোন কোন খাবারে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকে?
আমরা নিয়মিত যেসব খাবার গ্রহন করে থাকি তার মধ্যে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবারগুলি নিম্নরূপ –
- শস্য – যেমন রুটি, নুডলস, পাস্তা, ক্র্যাকার, সিরিয়াল এবং ভাত
- ফল – যেমন আপেল, কলা, বেরি, আম, তরমুজ এবং কমলালেবু
- দুগ্ধজাত দ্রব্য – যেমন দুধ এবং দই
- শুকনো মটরশুটি, মসুর ডাল এবং মটর সহ লেগুম
- স্ন্যাকস এবং মিষ্টি – যেমন কেক, কুকিজ, ক্যান্ডি এবং অন্যান্য ডেজার্ট
- ফলের রস, সহজলভ্য বিভিন্ন ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস যাতে চিনি থাকে
- সবজি – যেমন আলু, ভুট্টা এবং মটর
১০ টি স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার
১. লাল চাল
লাল চাল জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের মতো পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এটি শরীরে ধীরে ধীরে শোষিত হয় এবং শরীরে টেকসই শক্তি সরবরাহ করে। তাছাড়াও, লাল চাল তুলনামূলকভাবে কম গ্লাইসেমিক সূচক খাবার।
বিস্তারিত জানতে – বিভিন্ন প্রকার চাল ও লাল চাল খাওয়ার উপকারিতা
২. ওটস
ওটস একটি অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্যকর শর্করা জাতীয় খাবার এবং অনেক ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দুর্দান্ত উৎস। কাঁচা ওটসে ৭০% কার্বোহাইড্রেট থাকে। একটি ১-কাপ (৮১-গ্রাম) ওটসে ৮ গ্রাম ফাইবার সহ ৫৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। এবং এতে বেশিরভাগ শস্যের চেয়ে ওটসে বেশি প্রোটিন থাকে।
বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায় যে, ওটস কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, কারন ওটসে ওট বিটা গ্লুকান নামক একটি বিশেষ ধরণের ফাইবার থাকে।
ওটস খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রাও কমিয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।
তদুপরি, ওটস দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা দূরে রাখে, যা স্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
৩. মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু একটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় খাবার। ১০০ গ্রাম সিদ্ধ মিষ্টি আলুতে প্রায় ২০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যার মধ্যে স্টার্চ, চিনি এবং ফাইবার থাকে। এছাড়াও মিষ্টি আলু ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং পটাসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস।
এছাড়াও মিষ্টি আলু বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা আপনার কোষে ক্ষতিকারক ফ্রি
র্যাডিকেল নিষ্ক্রিয় করে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
৪. বীটরুট বা বিট
বীট হল একটি বেগুনি মূলের সবজি যা বীটরুট হিসাবেও পরিচিত। যদিও এতে সামগ্রিকভাবে কার্বোহাইড্রেট বেশি বলে মনে করা হয় না।
কাঁচা এবং রান্না করা বিটে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। বিট ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং উদ্ভিদ যৌগে পরিপূর্ণ । এতে উচ্চ পরিমাণে অজৈব নাইট্রেট রয়েছে, যা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে।
৫. রাজমা
রাজমাতে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। রান্না করা রাজমা প্রোটিনের একটি ভাল উৎস। এগুলি অ্যান্থোসায়ানিন এবং আইসোফ্লাভোন সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ সমৃদ্ধ।
রান্না করা রাজমাতে প্রতি ১০০ গ্রামে ২২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে।
৬. কাউন
কাউন একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার। পুষ্টিমানের দিক থেকে কাউন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিজ্ঞানীরা একে অন্যতম সুপারফুড বলে থাকেন।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাউনের চালে ৭৩ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও প্রোটিন, মিনারেল, ভিটামিন বি, ক্যালোরি ডায়োটরি ফাইবার, ও পটাসিয়াম রয়েছে।
৭. ছোলা
ছোলা ডাল জাতীয় খাবার। প্রতি রোজায় এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। যদিও সারা বছরই গ্রহন করা উচিত। রান্না করা ছোলাতে প্রতি ১০০ গ্রামে ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং প্রায় ৮ গ্রাম ফাইবার থাকে।
ছোলা উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস এবং এতে অনেক ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। ছোলা হৃৎপিণ্ড এবং হজমের পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৮. কলা
কলা একটি জনপ্রিয় ফল। একটি বড় কলায় (১৩৬ গ্রাম) প্রায় ৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, হয় স্টার্চ বা শর্করা আকারে। কলায় পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ এবং সি বেশি থাকে এবং এতে বেশ কিছু উপকারী উদ্ভিদ যৌগ থাকে। পটাসিয়ামের রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ।
কাঁচা বা সবুজ কলায় স্টার্চ বেশি থাকে। কলা পাকলে এটি প্রাকৃতিক শর্করায় রূপান্তরিত হয়। আপনি যদি কম পাকা কলা গ্রহন করেন তবে আপনি বেশি স্টার্চ এবং কম চিনি গ্রহন করবেন, জা খুবই স্বাস্থ্যকর। এছাড়াও এতে পেকটিন থাকে যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
৯. আপেল
অনেক রঙ, আকার এবং স্বাদের আপেল পাওয়া যায়, যার সবকটিতে সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রামে কার্বোহাইড্রেট তাহকে ১৪-১৬ গ্রাম।
আপেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উদ্ভিদ যৌগ থাকে। আপেল খাওয়া রক্তে শর্করার ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটাতে পারে, সেইসাথে হৃদরোগের ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমাতে পারে।
১০. দুধ
যেহেতু দুধে প্রাকৃতিকভাবে প্রোটিন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের সাথে কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই এই এক গ্লাস দুধ স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটের অন্যতম সহজলভ্য উৎস।
দুধ কেনার সময় খাঁটি গরুর দুধ পছন্দ করাই উত্তম। কেননা, প্যাকেটজাত দুধে অতিরিক্ত শর্করা থাকতে পারে, যা রক্তে শর্করা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ করতে পারে। গরুর দুধের বিকল্প হতে পারে সয়ামিল্ক, বাদাম দুধ এবং ওট মিল্ক ইত্যাদি।
পরিশেষে –
অনেকে বলে থাকেন যে, সমস্ত কার্বোহাইড্রেট অস্বাস্থ্যকর। আসলে, সাদা রুটি এবং ভাত অর্থাৎ যাতে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট বেশি পরিমাণে থাকে তা গ্রহন করা অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। অপরপক্ষে, অনেক স্বাস্থ্যকর খাবারে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। যা আপনি নিশ্চিন্তে গ্রহন করতে পারেন।
রেফারেন্স –