আদা আমাদের সুপরিচিত একটি ভেষজ উপাদান। এটি মূলত তরকারি বা মসলা হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। তবে মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এটি কিন্তু কাঁচা খাওয়া যায়, চা এর সাথে খাওয়া যায়। যেভাবেই খান না কেন এটি কিন্তু একটি উপকারী খাদ্যবস্তু। উপকারী ভেষজ হিসেবে এর অনেক নাম ডাক। নানা ধরনের ভিটামিন ও দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি ভেষজ এটি। আজ আমরা কাঁচা আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
আদা কি? (ginger)
আদাকে (ginger) মূলত মসলা হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। সে হিসেবে এটিকে মসলাই বলা চলে। মসলা হলেও এর রয়েছে ভেষজ গুণ। নানা রোগ নিরাময় ও পুষ্টি গুণে এর জুড়ি মেলা ভার। দারুণ এক ভেষজ ওষধি হিসেবে প্রাচীন কাল থেকেই এর ব্যবহার রয়েছে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং বি কমপ্লেক্স।
এছাড়াও আছে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সিলিকন, সোডিয়াম, আয়রন, দস্তা, ক্যালসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন জাতীয় খনিজ উপাদান। এ সকল উপাদান দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ও উপকারী।
আদা খাওয়ার উপকারিতা
আদা একটি দারুণ উপকারী খাদ্য উপাদান। এর রয়েছে নানাবিধ উপকার। এবার আমরা এর সেসব উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। আসুন জেনে নিই আদা খাওয়ার উপকারিতা কি কি।
ক) পেটের সমস্যায় ও গ্যাস্ট্রিকে
পেট খারাপ হলে ঘরোয়া একটি উৎকৃষ্ট উপায় হলো আদা খাওয়া। পেট খারাপের বিরুদ্ধে এটি খুবই উপকারী একটি খাদ্য। এটি পেট খারাপ হওয়া রোধ করে। পাশাপাশি এর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট পেটের পেশি শিথিল করে, ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দূর হয়। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে এটি খেতে পারেন।
খ) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের জন্য খুবই ভালো।
গ) ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারে
দেহের শর্করা বা চিনির পরিমাণ হ্রাস করতে এটি বেশ সহায়ক। পাশাপাশি এটি দেহে ইনসুলিন তৈরি করতেও সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
ঘ) কাশি ও গলা ব্যথায়
কাশির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম সমাধান হল আদা। এটি খেলে খুব দ্রুতই কাশি কমতে শুরু করে। কাশি বেড়ে গেলে বা অসহ্যকর পরিস্থিতি হলে এটি খেয়ে নিন। কাশি কমবে ও গলায় আরাম পাবেন। পাশাপাশি যদি আপনার গলা ব্যথার সমস্যা হয় তাহলেও এটি খেতে পারেন। কারণ, এটি একটি প্রাকৃতিক বেদনা বা ব্যথা নাশক। গলা ব্যথা কমাতেও তাই এটি বেশ কার্যকর। পাশাপাশি এটি ফুসফুসকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ঙ) মলমূত্রজনিত সমস্যায়
মলমূত্র জনিত যেকোনো সমস্যা হলে খেতে পারেন আদা। এতে থাকা ভিটামিন-বি৬ মলমূত্র জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আমাশয় জাতীয় সমস্যায়ও এটি বেশ কার্যকরী একটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
চ) বাতের ব্যথা ও মাইগ্রেনের সমস্যায়
আদাতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের হাড়কে মজবুত করে। ফলে বাতের ব্যথা দূর হয়। তাই যাদের বাত ব্যথার সমস্যা তারা নিয়মিত এটি খান। এতে বাত ব্যথা কমবে।
এছাড়াও কতিপয় গবেষণা মতে, আদা দিয়ে চা খেলে তা মাইগ্রেনের ব্যথায় খুবই কার্যকর। তাই মাইগ্রেনের ব্যথা হলে এটি দিয়ে লিকার চা তৈরি করে খেতে পারেন। এতে ব্যথা কমতে পারে।
ছ) মাসিকের ব্যথা কমাতে
আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি মেয়েদের মাসিকের ব্যথা কমাতে খুবই কার্যকর। তাই মেয়েদের মাসিকের সময় অসহ্য ব্যথায় আদা দিয়ে চা খান। এতে ব্যথা উপশম হয়।
জ) ক্যান্সার প্রতিরোধে
আদাতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। এটি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি খেলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ। এ সকল গুণ দেহকে গরম করতে সাহায্য করে। ঠান্ডার দিনে তাই বেশি শীত করলে দেহকে গরম করতে আদা খেতে পারেন। বাচ্চাদেরও শরীর গরম করতে এটি খাওয়াতে পারেন।
ঝ) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ক্ষত দূর করতে
এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি দাঁতের যত্নেও এটি বেশ উপকারী। দাঁতের ফাঁকে থাকা জীবাণু ধ্বংস করতে আদার রস খুবই উপকারী।
পাশাপাশি আদাতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এটি দেহের বিভিন্ন ক্ষত সারাতে বেশ দারুণ কাজ করে। তাই দেহের কোথাও কেটে গেলে বা জখম হলে বেশি করে আদা খান। এছাড়াও বমি বমি ভাব দূর করতেও আদা বেশ দারুণ সাহায্য করে। বমি বমি ভাব হলে এটি খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়।
এছাড়াও চুল পড়া কমানো কিংবা কান ব্যথাসহ নানাবিধ সমস্যায় এটি বেশ দারুণ কাজ করে থাকে। এক কথায় বিভিন্ন সমস্যার একটি অন্যতম সমাধান হল আদা।
কাঁচা আদার উপকারিতা
আদা বেশিরভাগ সময়েই রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও চা এর সাথেও এটি ব্যবহার হয়। তবে এটি কাঁচাও খাওয়া যায়। কাঁচা খেলেও এ থেকে উপকারিতা পাওয়া যায়। আসুন জেনে নিই কাঁচা আদার উপকারিতা সমূহ।
- কাঁচা আদা খেলে সর্দি, কাশিতে উপকার পাওয়া যায়।
- এটি কাঁচা খেলে গলা ব্যথার উপশম হয় দ্রুত।
- বমি বমি ভাব দেখা দিলে অল্প করে কাঁচা আদা লবণ দিয়ে খেয়ে নিন।
- বাতের ব্যথা দূর করতেও এটি কাঁচা খেতে পারেন।
- এটি কাঁচা খেলেও আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
- দাঁতে থাকা জীবাণু ধ্বংস করতে এটি খেতে পারেন কাঁচা বা রস করে।
খাওয়ার নিয়ম
আদা একটি ওষধি খাবার। এর থেকে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় তা আমরা এরই মধ্যে জেনে গেছি। কিন্তু এটি খাওয়ার নিয়ম কি? রান্নায় প্রায় প্রতিদিনই আমরা এটি ব্যবহার করি এবং খাই। তবে রান্না করে খেলে এ থেকে উপকার সামান্যই পাওয়া যায়।
এটি থেকে সম্পূর্ণ উপকার বা এর ওষধি গুণ পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী এটি খেতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী এটি ছেঁচে বা পিষে খাওয়া উচিৎ। এছাড়া লিকার চা এর সাথে ছেঁচে বা পিষে এটি মিশিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া টুকরো করে কেটে কাঁচা খাওয়া যায়। অনেকেই আদা পিষে ফ্রিজে রেখে খান। তবে এভাবে ফ্রিজে রেখে খেলে এর থেকে ওষধি গুণ পাবেন না।
আদার অপকারিতা
আদার অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। তবে এসব ঔষধি গুণ দেখেই প্রচুর পরিমাণে এটি খাওয়া শুরু করা যাবে না। তার আগে জানতে হবে এ থেকে কোনো অপকার হয় কি না। সকল কিছুর মতোই আদারও রয়েছে কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া। আসুন জেনে নিই এর অপকারিতার দিকগুলো।
- এটি শরীরে উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। তাই গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ, গর্ভাবস্থায় এটি খেলে প্রিম্যাচিউর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই গর্ভবতী নারীরা এটি এড়িয়ে চলবেন।
- আদা চা বেশি পান করলে মাইগ্রেনের সমস্যা কমার বদলে বাড়তে পারে৷ পাশাপাশি অনিদ্রার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা এটি বেশি খেলে শরীরে চুলকানি ও শরীর ও মুখ ফুলে যেতে পারে।
- এটি পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বেশি কমে যেতে পারে, যা ক্ষতির কারণ। পাশাপাশি যদি ডায়াবেটিস ও রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন তাহলে আদা এড়ানোই ভালো।
- আদা বেশি খেলে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এসব সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
পরিশেষে-
আদা এক দারুণ ভেষজ হলেও এটি খাওয়া উচিৎ পরিমিত পরিমাণে। শুধু আদাই নয় যেকোনো খাবার বা ভেষজ উপাদান বা ওষুধ খাওয়া উচিৎ পরিমিত পরিমাণে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেলে কোনো কিছুই আর উপকারী থাকে না। তখন এটি উপকারের বদলে অপকার করে। তাই সীমিত পরিমাণে আদা খান, আর এর ভেষজ গুণ দ্বারা সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্রঃ
- https://www.healthline.com/nutrition/11-proven-benefits-of-ginger
- https://www.medicalnewstoday.com/articles/265990
- https://www.webmd.com/diet/ss/slideshow-health-benefits-ginger
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর বেলায় খোদ কথাটা কেনো উচ্চারণ করা হলো তা বুঝিনা। লেখকের জেনে রাখা দরকার যে,রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মতো উত্তম শিক্ষক আর একজনও
জন্ম নেয়নি নিবেও না। লেখকের আরো জানা দরকার যে,মুসলমানদের অবদান চিকিৎসা বিজ্ঞান, বীজগণিত, জ্যোতির্বিদ্যা সহ সবক্ষেত্রেই ছিলো আছে থাকবে ইনশাআল্লাহ। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মেসেজটা সবার উপরে দেওয়ার জন্য আপনার ইমানের দাবি রাখে। ইসলামকে আপনারা যতটুকু ছোট ভাবেন তেমনটা নয়।
কিডনির সমস্যা থাকলে কি আদা খাওয়া যাবে।
জ্বী খাওয়া যাবে।
Amar লিভার এবং আলসার সমস্যা তাই মেডিসিন খাচ্ছি,আমি কি প্রতিদিন আদা,কালোজিরা,রসুন খালি পেটে খেতে পারব বা কোনটি খাবো এই ৩ টির মধ্যে জানালে উপকৃত হব
দয়াকরে আপনি ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন। যদিও উল্লেখিত খাবারগুলো পরিমিত পরিমাণে খেলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখায় না তারপরেও আপনি যেহেতু ওষুধ সেবন করছেন তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উত্তম। আপনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির এটাই পরামর্শ। কেননা, কোন ধরণের ওষুধ সেবন করছেন, আপনার বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট – এসবের উপর নির্ভর করে পরামর্শ দরকার।
ঠিক বলছেন জানি না আপনি, কে, খুব ভালো লাগবো, কথাগুলো।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।