সাপ কামড় দিয়েছে? বিষধর না বিষহীন? করনীয় কী?


সাপ কেমন প্রাণী তা আমরা সবাই জানি! সাপ কামড়ালেই কি মানুষ মারা যায়? না। প্রাথমিকভাবে দ্রুততর সময়ে চিকিৎসা করলে তেমন ক্ষতি হয় না। সব সাপই কি বিষধর? এর উত্তরও না। সব সাপই বিষধর হয় না। তাই সাপে কামড়ালে, কি সাপে কামড়েছে তা জানলে চিকিৎসা করাতে সুবিধা হয়। সাপে কামড় দিলে যত দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া যায় তত দ্রুত রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে দেরী করলে তা রোগীর জন্য ভয়ানক বিপদের কারণ হতে পারে।

সাপের বিষে কি থাকে?

মূলত সাপের বিষ হলো এক ধরনের লালা জাতীয় পদার্থ। এর প্রধান উপাদান হলো প্রোটিন, যা সাপের বিষের সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদানও। প্রোটিন ছাড়াও সাপের বিষে রয়েছে এনজাইম। এই এনজাইম ক্ষতির একটি বড় কারণ হতে পারে। সাপের কামড়ে বিষের মধ্যে থাকা এনজাইম মানুষের দেহের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, নিউক্লিওটাইড ফসফোলিপিডকে ভাঙতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এই বিষ রক্তের লোহিত কণিকাকেও ভেঙে দেয় এবং রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং পেশীর নিয়ন্ত্রণে বাঁধা প্রদান করে।

প্রোটিন ও এনজাইম ছাড়াও সাপের বিষে থাকে নিউরোটক্সিন ও জিংক সালফাইডের মতো অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ। এর মধ্যে নিউরোটক্সিন খুবই বিষাক্ত ও ক্ষতিকর একটি উপাদান।

বাংলাদেশের বিষাক্ত সাপ:

বাংলাদেশে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে সব বিষাক্ত নয়। তবে কিছু রয়েছে যারা অত্যন্ত বিষাক্ত।

বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির প্রধান অধ্যাপক এমএ ফায়েজের মতে-

”বাংলাদেশে থাকা সাপের মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর। এদের কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।”

মূলত দেশের গ্রামাঞ্চলেই সাপের উপদ্রব ও সাপের কামড়ে মানুষের মারা যাওয়ার সংখ্যা বেশি। এছাড়া দেশে ২৩ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপও রয়েছে যারা সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের কামড় দেয় বা দংশন করে।

বাংলাদেশে থাকা অত্যন্ত বিষাক্ত সাপের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে শঙ্খচূড় বা রাজ গোখরা, কেউটে বা গোখরা, চন্দ্রবোড়া, শঙ্খিনী ইত্যাদি। কিছু বিষাক্ত সাপ সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক।

শঙ্খচূড়/রাজ গোখরা সাপ (King Cobra)
শঙ্খচূড়/রাজ গোখরা সাপ (King Cobra)

শঙ্খচূড়/রাজ গোখরা (King Cobra)

আকারের দিক বিবেচনায় নিলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষধর হলো শঙ্খচূড় বা রাজ গোখরা সাপ। এরা নামে গোখরা হলেও ঠিক গোখরা নয়। এরা মূলত সাপ খাদক। অর্থাৎ, এরা অন্য সাপকে ভক্ষণ করে।

শঙ্খচূড় বা রাজ গোখরা মূলত ইলাপিড গোত্রের সাপ। বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চল এই সাপের একটি বড় আবাসস্থল। এছাড়াও অনেক সময় পাহাড়ি ঢলের সাথে আসাম, মিজোরাম থেকে বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই শঙ্খচূড় সাপ আসে।

শঙ্খচূড় বা রাজ গোখরা অত্যন্ত বিষাক্ত। এদের বিষ খুবই মারাত্মক। তবে প্রচন্ড বিষধর হওয়া সত্ত্বেও এরা সহজে মানুষকে কামড়ায় না কিংবা কামড়ালেও তেমন বিষ প্রয়োগ করে না। কিন্তু যদি বিষ প্রয়োগ করে তবে যাদের কামড় দেয় তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষই মারা যায়।

কেউটে/গোখরা (Monocled Cobra)

কেউটে/গোখরা সাপ (Monocled Cobra)
কেউটে/গোখরা সাপ (Monocled Cobra)

কেউটে একটি মারাত্মক বিষধর যা এর নামের মাধ্যমেই আমরা অনেকটা বুঝতে পারি। কেউটে সাপের নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “কালকূট” থেকে যার বাংলা অর্থ তীব্র মারণ বিষ। সুতরাং, নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে কেউটে একটি অত্যন্ত বিষধর সাপ।

এরাও ইলাপিড গোত্রের একটি সাপ। কেউটে নিজের সুদৃশ্য ফণার জন্য বেশ সুপরিচিত। এরা নিশাচর সাপ। মূলত রাতের বেলায়ই এই কেউটেরা বেশি বের হয়। তবে সন্ধ্যা ও ভোরের দিকে এদের আনাগোনা অনেক বেশি থাকে। কেউটে খুবই দ্রুতগতির এবং এরা বেশি সজাগ হয়ে চলাফেরা করে। বিপদ দেখলে বা বুঝলেই নিজের ফণা তুলে সজোরে ছোবল মারে।

শঙ্খচূড়ের মতো কেউটেও খুব সহজে মানুষকে কামড়ায় না। কামড়ালেও বিষ প্রয়োগ করে না সচরাচর। তাই এদের কামড়ে মানুষের মৃত্যু সংখ্যা কম। কেউটে মূলত বিভিন্ন জলজ প্রাণী যেমন: মাছ, শামুক ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে।

শঙ্খিনী/শাখামুটি (Banded Krait)

শঙ্খিনী/শাখামুটি সাপ (Banded Krait)
শঙ্খিনী/শাখামুটি সাপ (Banded Krait)
শঙ্খিনী জল ঢোরা সাপ গিলে ফেলছে
শঙ্খিনী জল ঢোরা সাপ গিলে ফেলছে

শঙ্খচূড়ের মতো শঙ্খিনীও একটি সাপখেকো সাপ। এরাও অন্য সাপকে খায়। এর মধ্যে আছে নিউরোটক্সিন বিষ। এই সাপকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। শাখামুটি এর অন্য নাম।

শঙ্খিনী দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। শান্ত স্বভাবের এই সাপের মাথা আকারে বড় এবং দেহ কালো ও হলুদ ডোরাকাটা। শঙ্খিনী অত্যন্ত বিষধর কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, এই সাপের কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ার কোনো ইতিহাস নেই দেশে।

সারা দেশেই শঙ্খিনী পাওয়া গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ভারত, নেপালসহ অন্যান্য অনেক দেশেই এই সাপের দেখা পাওয়া যায়।

গ্রামাঞ্চলে এই শঙ্খিনী দু’মুখো সাপ নামেও পরিচিত। সাপের ভোঁতা লেজ দেখে অনেকে একে মাথা ভাবেন। তাই এই সাপের দুমুখো নাম প্রচলিত, যদিও এর মাথা বা মুখ একটিই।

এই সাপটি অত্যন্ত মারাত্মক একটি সাপখেকো সাপ। এর ভয়ে অন্য সাপ চলাচল করে না এর আশেপাশে। এরা গোখরা, কেউটের মতো বিষাক্ত সাপকেও খেয়ে ফেলে। শঙ্খিনী সাপের বিষ খুব দামী এবং এর চামড়াও তুলনামূলকভাবে অন্য সাপের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

চন্দ্রবোড়া সাপ/রাসেল ভাইপার (Russell’s Viper)

মারাত্মক বিষধর হলো চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার। অত্যন্ত অসহিষ্ণু প্রজাতির হল এই রাসেল ভাইপার। সবচেয়ে বিষাক্ত এবং অসহিষ্ণু স্বভাব ও বড় বহির্গামী দাঁত দিয়ে অনেক বেশি মানুষকেই দংশন করে বা কামড় দেয় এই সাপ।

পৃথিবীতে সাপের কামড়ে মারা যাওয়া লোকদের একটা বড় অংশ এই সাপের কামড়ে মারা যায়। অত্যন্ত বিষধর রাসেল ভাইপার নিশাচর- ছোট পাখি, ব্যাঙ, ইঁদুরের মতো প্রাণীকে এরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

চন্দ্রবোড়া সাপ/রাসেল ভাইপার সাপ (Russell's Viper)
চন্দ্রবোড়া সাপ/রাসেল ভাইপার সাপ (Russell’s Viper)

চন্দ্রবোড়া সাপের দাঁত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বড় দাঁত। এদের বিষ হোমোটক্সিন। আর হোমোটক্সিন হওয়ার কারণে এদের কামড়ে মানুষের মাংস পঁচে যায়। চন্দ্রবোড়া নিজের শিকারকে অন্য সাপের মতো ধরার সাথে সাথে খেয়ে ফেলে না, ধরার পর নিজের পরিবারের সাথে ভাগ করে খেতেই এরা পছন্দ করে।

বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। অন্য সাপের মতো মানুষকে এড়িয়ে চলার চেয়ে কামড় দেওয়া বা দংশন করাতেই যেনো এরা বেশি আনন্দ পায়। প্রচুর পরিমাণ মানুষ হত্যার জন্য এই রাসেল ভাইপার “কিলিংমেশিন” নামেও পরিচিত।

কালাচ (Common Krait)

বাংলাদেশে থাকা শতাধিক সাপের মধ্যে অন্যতম বিষাক্ত হলো কেউটে, যা আমাদের দেশে কালাচ নামে পরিচিত। এই সাপ গুপ্তঘাতক হিসেবেও পরিচিত। আবার ঘুমন্ত মানুষকে কামড় দেওয়ার কারণে এটি ঘামচাটা নামেও পরিচিত। প্রচলিত আছে যে, ঘুমন্ত মানুষের ঘামের গন্ধে এই সাপ বিছানায় উঠে আসে।

কালাচ সাপ (Common Krait)

এ সাপের কোনো ফণা নেই। তবে এটি মারাত্মক বিষধর একটি সাপ। এই সাপে কামড় দিলে বিষ প্রয়োগ হবেই। বাংলাদেশ প্রায় সব জায়গায়ই আছে। কালাচ নিশাচর। গভীর রাতে চলাচল করে।

কাউকে কামড় দিলে শতভাগ বিষই প্রয়োগ করে কালাচ, যেখানে অন্য প্রজাতি শতভাগ বিষ প্রয়োগ করে না। এই সাপের কামড়ে মশার কামড়ের মতো দাগ হয় যার কারণে মানুষ বুঝতেই পারে না যে তাকে সাপে কামড়েছে। আর এই না বুঝতে পারার ফল হয় ভয়াবহ।

কালাচ মানুষের ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত মানুষকে বিছানায় উঠে কামড় দেয়। তাই কালাচ থেকে রক্ষা পেতে মশারী টানিয় ঘুমানো ভালো। কালাচ সাপের বিষ নিউরোটক্সিন। দ্রুত ও ঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এই সাপের কামড়ে মৃত্যু নিশ্চিত।

বাংলাদেশের বিষহীন সাপ

বিষাক্ত সাপের বিষয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে যে শুধু বিষাক্ত সাপই আছে এমন না। শতাধিক প্রজাতির সাপের মধ্যে মাত্র ৭-৮ প্রজাতির সাপই বিষাক্ত হয়। বাকি প্রজাতির সাপগুলোর বেশিরভাগই বিষহীন। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বিষহীন সাপগুলো হল: অজগর, গুই সাপ, ঢোড়া, দাঁড়াশ, কালনাগিনী ইত্যাদি। এবার এদের নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

ঢোড়া

বিষহীন সাপের মধ্যে অন্যতম হলো ঢোড়া বা জল সাপ। গ্রামে কিংবা শহরে সমান ভাবেই দেখতে পাওয়া যায় এই সাপ। এই সাপ নকশি ঢোড়া সাপ কিংবা ধোরা সাপ নামেও পরিচিত।

ঢোড়া সাপ
ঢোড়া সাপ

ঢোড়া সাপ ডোবা, নালা, ধানক্ষেত, পুকুর ইত্যাদিতে থাকে। এরা দিন ও রাত উভয় সময়েই থাকে। খাদ্য হিসেবে মাছ, ব্যাঙ, পাখি ইত্যাদি গ্রহণ করে। উত্তেজিত হলে এরা হিংস্র আচরণ করে। এরা তেমন একটা কামড় দেয় না। তবে অসতর্ক থাকলে কামড় দিতে পারে।

অজগর সাপ
অজগর সাপ

অজগর

দেখতে বিশাল আকৃতির এই প্রাণী বা সাপটি আকারে বড় হলেও বিষহীন একটি সাপ। বিশালাকৃতির দেহ সত্ত্বেও অজগরের রয়েছে অনন্য দক্ষতা। এই দক্ষতার মাধ্যমেই অজগর তার শিকারকে ধরে। শিকারকে ধরার পর তাকে শ্বাসরোধের মাধ্যমে হত্যা করে অজগর।

অজগরের ওজন গড়ে প্রায় ৩২ কেজি হয় এবং দৈর্ঘ্য হয় গড়ে ১ থেকে ৭.৫ মিটার পর্যন্ত। মূলত গভীর বনাঞ্চলের দিকেই এই সাপ দেখা যায়। এরা বছরে ৫ বার খায়। এই প্রজাতির সাপেরা পাখি, বড় টিকটিকি, ইঁদুর ইত্যাদি খাবার খায়।

গুই সাপ

গুই সাপ দেখতে অনেকটা বড় আকারের টিকটিকির মতো কিন্তু এদের জিহবা সাপের মতোই দ্বিখন্ডিত। বাংলাদেশে সাধারণত ৩ প্রজাতির গুইসাপ দেখা যায়। এরা হল: সোনা গুই, কালো গুই, রামগদি বা বড় গুই।

এটি বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়ই এক সময় দেখতে পাওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে এটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। মূলত মানুষের কারণেই গুই-সাপ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গুই সাপের চামড়া অনেক দামী হওয়ায় মানুষ এদের মেরে ফেলে চামড়া পাচার করে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

গুই সাপ

গুই সাপ মানুষের ক্ষতি করে না তেমন। বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের বেশ অবদান রয়েছে। তাই এদের টিকিয়ে রাখতে গুই সাপ মারা বন্ধ করা খুবই জরুরী।

দাঁড়াশ

কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত দাঁড়াশ মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। উপরন্তু ইঁদুর খেয়ে কৃষকের কৃষি জমি রক্ষায় গোপন উপকার করে। কিন্তু কুসংস্কারের কারণে মানুষ এদের মেরে ফেলে। ফলস্বরূপ এদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।

দাঁড়াশ সাপ
দাঁড়াশ সাপ

কৃষি জমির আশেপাশেই মূলত এই সাপের বসবাস। ক্ষতিকর ইঁদুর খেয়ে এরা কৃষি জমির উপকার করে। কিন্তু মানুষ এদের বিষাক্ত সাপ ভেবে প্রায়ই মেরে ফেলে৷ কিন্তু দাঁড়াশ নির্বিষ। এক্ষেত্রে তাই সচেতনতা তৈরি হওয়া জরুরী।

কালনাগিনী সাপ
কালনাগিনী সাপ

কালনাগিনী

বাংলা সিনেমা কিংবা সাপুড়েদের মুখে সবচেয়ে বেশি শোনা সাপের নাম নিশ্চিতভাবেই কালনাগিনী। সিনেমা কিংবা অন্য বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে কালনাগিনী সম্পর্কে সঠিক তথ্য আমরা খুব কমই জানি। অনেকেরই ধারণা কালনাগিনী খুবই বিষাক্ত একটি সাপ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

বাস্তবে কালনাগিনী একটি নিরীহ সাপ। এই সাপের কোনো বিষ নেই। দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এই সাপকে মানুষ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বিষাক্ত ভেবে মেরে ফেলে। এর ফলে এই সাপের সংখ্যা দিন দিন কমছে। একসময় সারা দেশে প্রচুর পরিমাণে দেখা গেলেও বর্তমানে শুধু গভীর বনেই কালনাগিনী দেখা যায়। কালনাগিনী টিকটিকি, পোকামাকড়, ব্যাঙ, ছোট পাখি ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে।

ঘরগিন্নি

অদ্ভুত নামের এই সাপটি একটি বিষহীন সাপ। শান্ত প্রকৃতির এই সাপের তিনটি প্রজাতি বাংলাদেশে দেখতে পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘরগিন্নি দেখতে পাওয়া যায়। তবে খুব বেশি পরিমাণে কিংবা নিয়মিত দেখতে পাওয়া যায় না বলে এই সাপটিকে একপ্রকার বিরলই বলা চলে।

ঘরগিন্নি সাপ

ঘরগিন্নি মূলত বনজঙ্গল, ফসলি জমি, ঝোপঝাড়ে বাস করে। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল ও ভারতে এই সাপ দেখতে পাওয়া যায়। এরা ব্যাঙ, গিরগিটি, পোকামাকড় ইত্যাদি খেয়ে থাকে।

দুধরাজ

নাম শুনে মনে হতেই পারে যে দুধরাজ হয়তো দুধ খায় বা দুধ দেয়। কিন্তু এরা আসলে দুধ দেয়ও না আবার দুধ খায়ও না, তবু এদের নাম দুধরাজ। বিষহীন অত্যন্ত ক্ষিপ্র গতির এই সাপ ক্ষিপ্রতায় যেকোনো বিষধর সাপের চেয়েও এগিয়ে।

দুধরাজ সাপ
দুধরাজ সাপ

বিষ না থাকলেও এই সাপ বেশ হিংস্র প্রকৃতির। রেগে গেলে এরা মানুষকে কামড়ও দেয়। কিন্তু বিষ না থাকায় এদের কামড়ে মানুষ মরে না। গ্রামে-গঞ্জে ভ্রান্ত ধারণা মানুষের মধ্যে যে দুধরাজ গরু-ছাগলের ওলানের দুধ খেয়ে ফেলে। তাই মানুষ এদের দেখলেই মেরে ফেলে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। দুধরাজ কিংবা অন্য কোনো সাপই কোনো দুধ খায় না। ইঁদুর, গিরগিটি, কাঠবিড়ালি ইত্যাদি হল দুধরাজ সাপের প্রিয় খাবার।

বিষাক্ত  বিষহীন সাপ চেনার উপায়

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের আতঙ্কের এক বড় নাম হল সাপ। বিষাক্ত আর বিষহীন সাপের পার্থক্য করতে না পারার কারণে মানুষের আরো বেশি সমস্যা হয়৷ কিভাবে তাহলে বিষাক্ত ও বিষহীন সাপ চেনা যায়? আসুন জেনে নিই।

বিষাক্ত সাপ চেনার উপায়:

বিষাক্ত সাপ চেনার রয়েছে বেশ কিছু উপায়।

  • চোখের মণি দেখতে লম্বাটে।
  • লম্বাটে বিষদাঁত রয়েছে।
  • লম্বাটে বিষদাঁতের মাধ্যমে কামড় দিয়ে মানুষের দেহে বিষ ঢুকিয়ে দেয়।

বিষহীন সাপ চেনার উপায়:

এবার জানা যাক বিষহীন সাপ কিভাবে চিনবো।

  • দাঁত আছে কিন্তু বিষগ্রন্থি নেই।
  • চোখের মণি গোলাকার।
  • লম্বাটে বিষদাঁত নেই।

সাপ তাড়ানোর উপায়:

বিষাক্ত সাপের কামড় মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। আবার বিষহীন সাপকেও মানুষকে অনেক সময় না বুঝে ভয় পেয়ে মেরে ফেলে। তাই দুইদিক বিবেচনা করেই সাপকে মারার চেয়ে তাড়িয়ে দেওয়া ভালো। প্রাকৃতিক কিংবা এসিড দিয়ে দুইভাবেই সাপকে তাড়ানো যায়।

সাপ তাড়ানোর এসিড:

সাপ তাড়ানোর অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হল কার্বলিক এসিড। ঘরের চারপাশে কার্বলিক এসিড ছিটিয়ে রাখলে সাপ আসে না ঘরে।

যদি কার্বলিক এসিড না পাওয়া যায় তাহলে করণীয় কি? এসিড পাওয়া না গেলে কার্বলিক এসিড যুক্ত সাবান দিয়ে কাজ চালানো যায়।

এছাড়াও সালফারের গুঁড়া বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দিলে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। সালফারের গুঁড়া সাপের ত্বকের জ্বালার সৃষ্টি করে। তাই সাপ এ থেকে দূরে থাকে।

সাপ তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়:

প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপায়েও সাপ তাড়ানো যায়। এবার সে বিষয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক।

  • রসুন একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। রসুন পেস্ট করে এর সাথে যেকোনো তেল মিশিয়ে একদিন রেখে দিয়ে বাড়ির চারপাশে স্প্রে করে দেয়া যেতে পারে।
  • বাড়ির চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে সাপের আনাগোনা থাকবে না। বাড়ির চারপাশে কোনো ঝোপঝাড় হতে দেওয়া যাবে না এবং কোনো প্রকার পানি জমতে দেওয়া উচিৎ নয়।

আরও জানতে চাই:

দুমুখো সাপ কি বিষাক্ত?

আমাদের বাড়িঘরের আশেপাশে সবচেয়ে বেশি যে সাপটি দেখা যায় তা হল দুমুখো সাপ। এরা কি বিষাক্ত? অনেকে মনে করেন এরা খুবই বিষাক্ত। কিন্তু বাস্তবতা হল বিষাক্ত নয়।

দুমুখো একটি বিষহীন ও নিরীহ সাপ। এরা একাকী থাকতে পছন্দ করে। এরা নরম কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে।

মানুষের প্রচলিত ধারণা থেকে এর নাম দুমুখো হলেও এর মুখ কিন্তু একটিই। লেজের দিকটা দেখতে অনেকটা মুখাকৃতির বলে মানুষ ভাবে এর দুই মুখ। তাই একে দুমুখো সাপ হিসেবেই চিনে মানুষ।

সাপ কি দুধ খায়?

সাপ দুধ খায় বলেই আমাদের দেশ কিংবা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের বিশ্বাস। কিন্তু আদতে কি দুধ খায়? দুধ হজম করার মতো যথাযথ উপাদানই নেই সাপের পাকস্থলীতে। তাহলে দুধ খাবে কি করে?

সাপের ক্ষেত্রে দুধ অনেকটা বিষের মতোই। তাই দুধ খায় না। কারণ দুধ হজম করতে পারে না। তাহলে যারা সাপের খেলা দেখায় তারা কিভাবে দুধ খাওয়ায় সাপকে?

এর উত্তর হলো, অনেকদিন পানি খেতে না পারলে সাপকে যে তরলই দেওয়া হয় তা-ই খায় সাপ। এ পদ্ধতি অবলম্বন করেই হয়তো সাপের খেলা দেখানোর সময় দুধ খাওয়ানো হয় সাপকে।

স্বপ্নে সাপ দেখলে কি হয়

অনেকেই স্বপ্নে সাপ দেখে থাকেন। কি এর ব্যাখ্যা তা অনেকেই জানতে চান।

মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, নারীদের ক্ষেত্রে মানে হল তার যৌন আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ৷ অর্থাৎ,যৌন আকাঙ্ক্ষার কারণেই নারীরা স্বপ্নে সাপ দেখে থাকেন।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে আরও যা যা হতে পারে:

  • আপনার জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে।(*)
  • পরিচিত মানুষ দ্বারা ঠকতে পারেন এ সম্পর্কিত সাবধানবাণী । (*)
  • হতে পারে আপনার মধ্যে আধ্যাত্মিক শক্তি জেগে উঠা। (*)
  • এছাড়াও কোনো কিছু বা মানুষের সাথে সম্পর্ক ছেদ হওয়াও যুক্ত। (*)

* বৈজ্ঞানিক সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

পরিশেষে –

সাপ একটি একই সাথে উপকারী ও ক্ষতিকর প্রাণী। সাপের দ্বারা মানুষের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি মানুষের উপকার করে। কৃষকের ফসলের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রাণী। এছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও সাপের গুরুত্ব অপরিসীম।

সাপের চামড়া দামী হওয়ায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে সাপের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এছাড়া পরিবেশ দূষণের কারণেও অনেক সাপ মারা যাচ্ছে। তাই সাপের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধ করা খুবই জরুরী।

আরও পড়তে পারেনঃ

4 Replies to “সাপ কামড় দিয়েছে? বিষধর না বিষহীন? করনীয় কী?”

  1. সাপ বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য জেনেছি এই পোস্ট থেকে। এই পোস্টের প্রত্যেক্টি তথ্যই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছে। লেখককে ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে লেখার জন্য।

    1. মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যের জন্য আমাদের ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

  2. লেখাটি পড়ে অনেক ভাল লাগল। এমন সুন্দর সুন্দর তথ্য আরও বিস্তারিত জানতে চাই। এই আর্টিকেলে শুধুমাত্র সাপ সম্পর্কে জানা গেলেও আমাদের সাথে poshupakhi ওয়েবসাইটে আরও প্রানীর দেখা মিলে।

  3. সাপ নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। অনেক কিছুই গুরুত্বপূর্ন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এমন সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে আরও একটি আর্টিকেল আছে। পড়ে ভাল লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.