মেছতা কি?
মেছতা হলো এক ধরনের দাগ যা দেখতে কালো ছোপ ছোপ। এটি সাধারণত চোখের নিচে, মুখে বা চেহারায় হয়ে থাকে। মুখের মধ্যেই এটির দেখা পাওয়া যায় বেশি। অনাকাঙ্ক্ষিত এই দাগ চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে। মেছতা হলে সাধারণত আমরা চিন্তায় পড়ে যাই যে কি করলে তা দূর হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর কোনো সঠিক সমাধান আমরা বের করতে পারি না। ফলে আমরা নানা রকম প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি, আর প্রায় ক্ষেত্রেই না জেনে এসব প্রসাধনী ব্যবহার উপকারের বদলে ক্ষতিই করে থাকে। কারণ, সকল প্রসাধনী সবার ত্বকে খাপ খায় না, উল্টো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব প্রসাধনী ব্যবহারই মেছতা হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
সবার ত্বকে যেমন সব প্রসাধনী ভালো ফল দেয় না, তেমনি ত্বকের মতো সংবেদনশীল একটি অঙ্গের যত্নে যেকোনো কিছু হুট করে ব্যবহার করাও উচিৎ না। বাজারে থাকা অনেক প্রসাধনীই আমাদের ত্বকে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই মূলত মেছতা বা এ জাতীয় দাগ দেখা দেওয়ার অন্যতম কারণ। আজকের এই লেখায় আমরা এই মেছতা দূর করার উপায় সমূহ নিয়েই জানার চেষ্টা করবো। জানবো প্রাকৃতিক কিংবা ঘরোয়া কি কি উপায়ে আমরা এই দাগ দূর করতে পারি।
মেছতা কোথায় হয়?
মেছতা সাধারণত মুখেই বেশি দেখা যায়। তবে এটি সারা শরীরেই হতে পারে। ত্বকের বিভিন্ন অংশে এই দাগ দেখা যায়। এটি আমাদের দেহের সৌন্দর্যে একটি বড় অন্তরায়। মুখে বা ত্বকে এই দাগ হলে তা দেখতে বেশ বাজে দেখায়। এটি আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে এটি হলে আমাদের চিন্তার শেষ থাকে না। তাই এটি দূর করতে আমরা চিন্তিত হয়ে উঠি।
সাধারণত ছেলেদের চেয়ে মেয়েদেরই এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। তবে ছেলেদের যে এই রোগ হয় না এমনটা কিন্তু মোটেও না। যে কারও ক্ষেত্রেই এই রোগ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। আজ আমরা এই মেছতা দূর করার উপায় গুলো নিয়েই জানবো।
মেছতা দূর করার উপায়
মেছতা বেশ দীর্ঘস্থায়ী একটা সমস্যায় পরিণত হতে পারে। এটি আমাদের ত্বকের উপর বেশ প্রভাব ফেলে। আর এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা ধীরে ধীরে ত্বকের মধ্যে চিরস্থায়ী দাগের সৃষ্টি করতে পারে। তাই সমস্যা গাঢ় হওয়ার আগেই এটির সমাধানের চেষ্টা করা উচিৎ।
ত্বকের বাহিরের স্তরে মেছতা হলে তা অনেকটা সহজেই নির্মূল হয়ে যায়, তবে ভিতরের স্তরে হলে তা সহজে নির্মূল হতে চায় না। মেছতা নির্মূল করতে হলে না জেনে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার না করে কিছু ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করে এই রোগ নির্মূল করার চেষ্টা করা যায়। আসুন জেনে নিই কি কি উপায়ে এই রোগ দূর করা যেতে পারে:
- মেছতা হলে লেবুর রস ব্যবহার হতে পারে একটি অন্যতম কার্যকর একটা উপায়। মেছতার দাগ দূর করতে প্রতিদিন দুই বেলা করে লেবুর রস ব্যবহার করলে এই দাগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
- অ্যালোভেরা হতে পারে এই দাগ দূর করার একটি অন্যতম উপায়। অ্যালোভেরা সরাসরি ব্যবহার করা ছাড়াও আলুর পেস্ট করে, তার সাথে এই অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- আমন্ড তেল ও তার সাথে মধু মিশিয়েও মেছতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমন্ড তেলের সাথে মধু মিশিয়ে মেছতার দাগে লাগালে উপকার পেতে পারেন।
- এছাড়াও গুড়া দুধ দিয়েও মেছতা দূর করতে পারেন। গুড়া দুধের সাথে গ্লিসারিন মিশিয়ে তা দাগে লাগালে দাগ কমতে পারে।
- মুখে বা ত্বকে কলার খোসার ব্যবহার করতে পারেন যা আপনাকে মেছতা দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
- কলার খোসা ছাড়াও কমলালেবুর খোসাও এই রোগ দূর করতে সাহায্য করতে পারে। কমলালেবুর খোসা মধুতে ভিজিয়ে তা মুখে লাগালে উপকার পাওয়া সম্ভব।
- লেবুর রসের সাথে ভিনেগার মিশিয়েও ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি শুধু ভিনেগারও ত্বকে ব্যবহার করলে এই দাগের রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এসকল ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায় ছাড়াও মেছতার সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন রকমের প্রসাধনীও ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন রকম প্রসাধনী ব্যবহার করেও এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায় যা মেছতার ক্ষেত্রে উপকার দিতে পারে। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে বাজার থেকে বিভিন্ন রকম প্রসাধনী কিনে ব্যবহার করতে পারেন, তাতে উপকার পেতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসকল প্রসাধনী ব্যবহার উপকারের বদলে ক্ষতি করে দিতে পারে। তাই এসব ব্যবহারে সতর্ক থাকাই শ্রেয়।
পুরুষের মেছতা দূর করার উপায়
অনেকের ধারণা মেছতা শুধুমাত্র মেয়েদের হয়ে থাকে। তবে এই ধারণা ভুল। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও এই রোগ হতে পারে। তবে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ত্বক কিছুটা ভারী হওয়ায় ছেলেদের ক্ষেত্রে কিছুটা সহজে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নিই ছেলেদের ক্ষেত্রে কি কি উপায়ে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন:
- লেবুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে মেছতাযুক্ত স্থানে লাগাতে পারেন। এতে মেছতা দূর হতে পারে।
- এছাড়াও লেবুর রসের সাথে চন্দন গুড়া করে তার সাথে অল্প পরিমাণে গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে বেশ ভালো উপকার পাবেন।
- পাশাপাশি কমলালেবুর খোসা গুড়া করেও ব্যবহার করতে পারেন। কমলালেবুর খোসার গুড়ার সাথে মধু ও অল্প পরিমাণ গ্লিসারিন মিশিয়ে তা ত্বকে ব্যবহার করলে দারুণ উপকার পেতে পারেন।
এগুলো ছাড়াও পুরুষের মেছতা দূর করতে চাইলেও বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
মেছতা থেকে দূরে থাকতে করণীয়
রোগ হওয়ার পর প্রতিকারের চেয়ে হওয়ার আগে সতর্ক থাকা ভালো। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে মেছতা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। আসুন জেনে নিই কি কি সতর্কতা অবলম্বন করলে এই রোগ থেকে দূরে থাকা যায়:
- সূর্যের প্রখর তাপ থেকে দূরে থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- ত্বকের যেকোনো প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিৎ। না জেনে যেকোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিৎ না।
- ত্বককে ধুলো ময়লা থেকে রক্ষা করা। বাইরে থেকে এলে ভালো করে ত্বক পরিষ্কার করা।
- মুখে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা উচিৎ না। এছাড়াও বেশি পরিমাণের ক্ষারযুক্ত সাবান মুখে ব্যবহার না করা উচিৎ।
- কোনো কিছু দিয়ে মুখে জোরে না ঘষা। এছাড়াও ময়লা হাতে মুখে স্পর্শ করা উচিৎ না। তাতে ত্বক সুরক্ষিত থাকে অনেকটাই।
- ত্বকে, মুখে প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা। না জেনে বা না বুঝে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিৎ না। ত্বক খুবই সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। তাই এটির যত্নে যথাসম্ভব সতর্ক থাকা উচিৎ।চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিৎ না ত্বকে।
এ সকল সতর্কতা অবলম্বন করলে মেছতা থেকে অনেকটাই দূরে থাকা সম্ভব। পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই সতর্ক থাকা যায় এসকল দিকগুলো অবলম্বন করে।
উপসংহার
মেছতা একটি বাজে রকমের সমস্যা যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই দাগ আমাদের ত্বকে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং ত্বককে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ করে। নারী কিংবা পুরুষ যে কারও জন্যই এই সমস্যা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে৷ তাই আগে থেকে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা সহজে দেখা দেয় না। তবে কোনো কারণে যদি মেছতার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে মেছতা দূর করার উপায় সমূহ কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন।
প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ে সমাধান না পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ হবে। আর যেকোনো রকমের প্রসাধনী ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী। মনগড়া ভাবে যেকোনো প্রসাধনীর ব্যবহার ডেকে আনতে পারে সমূহ বিপদ। তখন মেছতা দূর হওয়ার পরিবর্তে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক।