পৃথিবীর সর্বোত্তম খাবারের নাম জিজ্ঞেস করা হলে সম্ভবত নির্দ্বিধায় দুধের নাম বলে দেওয়া যায়। দুধ একটি অন্যতম সেরা খাদ্য। দুধের পুষ্টিমানের কারণেই দুধ সেরা খাদ্য। দুধে রয়েছে সর্বোচ্চ পুষ্টি যা দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। দুধের অপরিহার্য উপাদান হল ল্যাকটোজ, যা মানুষের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাকটোজ মানুষের মেধা ও মনন বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও গরুর দুধে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যামাইনো এসিড, আয়োডিন, জিংক ইত্যাদি অত্যাবশকীয় উপাদান যা শরীরের গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, দুধে বা গরুর দুধে রয়েছে সকল প্রকার পুষ্টির সমন্বয়। সুতরাং, দুধকে পুষ্টির আধার বলাই যায়। মানুষের শরীর ও স্বাস্থ্য রক্ষার প্রধান উপাদানই হল দুধ।
দুধের প্রধান উপাদান কয়টি ও কি কি?
দুধ এমন একটি খাদ্য যাতে প্রায় সব ধরনের উপাদানই আছে। খাদ্যের প্রধান উপাদান হলো ৬ টি। আর দুধে খাদ্যের ৬ টি উপাদানের সবগুলোই আছে। এছাড়াও আছে বেশি পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম, যা শিশুদের বেড়ে উঠা ও হাড়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। শিশুদের হাড়ের গঠনে তাই দুধের ভূমিকা অপরিসীম।
তাছাড়াও দুধে রয়েছে ল্যাকটোজ। এটি দুধের অপরিহার্য উপাদান যা মানুষের দেহের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া দুধে রয়েছে ভিটামিন, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়ামের মতো খনিজ পদার্থও। অর্থাৎ, মানুষের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল উপাদানই দুধে রয়েছে।
দুধের প্রধান উপাদান হল:
পানি, ল্যাকটোজ, খনিজ (লবণ), ফ্যাট বা চর্বি, প্রোটিন।
দুধের উপকারিতা:
দুধ একটি সর্বগুণ সম্পন্ন খাদ্য। তাই একে বলা হয় সুপার ফুড। এ থেকে বোঝাই যায় যে, দুধ পানের উপকারিতা অনেক। দুধের উপকারিতা গুলো এবার জেনে নেওয়া যাক:
- শরীরকে সুস্থ রাখে, শরীরে শক্তি যোগায়।
- শরীরের ক্লান্তি দূর করে।
- মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।
- ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
- দাঁত ও হাঁড়কে মজবুত করে।
- দৈহিক পেশি গঠনে সাহায্য করে।
- শিশুদের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- চুলের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণেও দুধের ভূমিকা রয়েছে।
- হজমশক্তি বাড়ায় ও পাকস্থলীকেও পরিষ্কার রাখে।
এছাড়াও দুধ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিশুদের জন্য দুধ:
দুধে রয়েছে অনেক উপকারী খাদ্য উপাদান। সে সকল খাদ্য উপাদান মানুষের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এ সকল খাদ্য উপাদান ছোট শিশুদের জন্যও দরকারী। কিন্তু শিশুরা অনেক সময়ই সকল খাদ্য খেতে চায় না। তাই তারা পরিপূর্ণ পুষ্টিও পায় না। এজন্য তাদের জন্য দুধ হতে পারে এক সহজ সমাধান। দুধ থেকেই শিশুরা পেতে পারে সকল প্রকার পুষ্টি। চলুন দেখে নিই দুধ থেকে শিশুদের কি উপকার হয়:
- শিশুদের শরীর ও মন প্রফুল্ল ও সতেজ থাকবে।
- মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।
- মস্তিস্কের গঠন ভালো হয় ও তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
- শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
- দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি, যা শিশুদের হাঁড়ের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিন কি পরিমাণ দুধ খাওয়া উচিত?
প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়া উচিৎ প্রত্যেকের। কারণ প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে আমাদের পুষ্টির সকল চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। আসুন জেনে নিই কেন প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়া উচিৎ।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রতিদিন এক গ্লাস পান করা উচিৎ।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- মানসিক চাপ ও কাজের পর চেপে বসা অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।
- নারীদের পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে খুবই কার্যকরী।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- শিশুদের মাংসপেশির গঠন উন্নত হয়।
- ডি-হাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় খুবই কার্যকর।
- হজমশক্তি বাড়ে ও বুকে জ্বালাপোড়া থাকলে তা দূর হয়।
- ত্বক নরম, কোমল ও সুন্দর হয়।
গরম নাকি ঠান্ডা?
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে, আদর্শ খাবার দুধ ঠান্ডা নাকি গরম কীভাবে খাওয়া ভালো? এবার এ বিষয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
- দুগদ্ধজাত খাবার অনেকেরই হজম হয় না। কারণ, গরম দুধ ঠান্ডা দুধের চেয়ে হালকা হওয়ায় এটি সহজে হজম হয়।
- আমরা অনেকেই জানি যে, রাতে এক গ্লাস খেলে ঘুম ভালো হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ঠান্ডা না গরম দুধই শ্রেয়। কারণ, দুধে থাকা অ্যামাইনো এসিড মূলত ঘুমের জন্য ভালো। আর এই অ্যামাইনো এসিড গরম দুধেই সক্রিয় থাকে।
- অপরদিকে দেহের স্থূলতা কমাতে ঠান্ডা দুধের ভূমিকা রয়েছে। কারণ ঠান্ডা দুধ দেহের বিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, আর এতে বেশি ক্যালরি খরচ হয়। ফলে দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য হয়।
- বুক ও পেট জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ঠান্ডা বেশ কার্যকর। প্রতিদিন এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পানে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে, পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
- ঠান্ডা দুধ দেহের পানিশূন্যতা বা ডি-হাইড্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
- ঠান্ডা লাগলে অর্থাৎ সর্দি, কাশির সমস্যায় গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা কমে যায়।
- গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে মেয়েদের পিরিয়ডের ব্যথা থেকে প্রশান্তি মিলে।
দুধ খেলে পেটে সমস্যা – তবে কি ক্ষতিকর?
অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন দুধ খেলে পেটে সমস্যা হয়। চলুন জেনে নেই কেন আপনার জন্য ক্ষতিকরঃ-
- যারা রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন।
- খাদ্যনালীতে যাদের ক্ষতরোগ আছে তাদের সতর্ক থাকা উচিৎ।
- পরিপাকতন্ত্রের আলসারের সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য নিষেধ।
- এছাড়া যাদের পেটে অস্ত্রোপচার বা অপারেশন করা হয়েছে তাদের খাওয়া উচিৎ নয়।
তাছাড়া যাদের শরীরে সুগার এসিডের অভাব আছে তাদেরও দুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেন চিকিৎসকরা।
খালি পেটে দুধ খেলে কি হয়?
অনেকেই সকালে খালি পেটে দুধ পান করেন। এক প্রকার অভ্যাস অনেকেরই। এই বিষয়ে অভ্যাস কতটা ভালো?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কারো সমস্যা না হয় তবে সে সকালে খালি পেটে দুধ খেতে পারে। তবে যাদের শর্করার সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে কিছু খাওয়ার পর দুধ পান করা ভালো।
শরীর ভেদে হজমশক্তির উপর নির্ভর করেই দুধ বা খাদ্য গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা উচিৎ।
দুধ না খেলে কি হয়?
”দুধ না খেলে হাড় শক্ত হবে না” এমন তথ্য ভুল বলেই প্রকাশিত হয়েছিলো সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক জার্নালে।
এছাড়াও দুধ খাওয়া কমিয়ে দিলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। অপরদিকে বাজার থেকে কেনা প্যাকেটজাত দুধে ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ কম থাকলেও চিনির পরিমাণ বেশি থাকে যা থেকে ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এছাড়াও চিকিৎসকদের মতে ত্বকের রোগ থাকলে দুধ না খাওয়াই ভালো।
তাছাড়া অতিরিক্ত দুধ পান করলে শরীরের মেদ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আদর্শ খাবার?
উপরের সকল আলোচনা থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে, দুধে সকল প্রকার খাদ্য উপাদান থাকে। অর্থাৎ, সকল খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ দুধ হলো সুপার ফুড। দুধ থেকে সকল প্রকার পুষ্টিই পাওয়া যায়।
ছোট থেকে বড় সকলের জন্যই এটি একটি উপকারী খাদ্য। এতে রয়েছে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি। প্রতিদিন এক গ্লাস পানে যে উপকার আমরা পাবো তা অন্য কোনো খাদ্য থেকে আমরা পাবো না। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়িয়ে তুলবে তেমনি দেহের অন্যান্য উন্নতিও সাধন করবে।
তাই বলাই যায়, দুধ একটি আদর্শ খাদ্য। প্রত্যেকেরই উচিৎ প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস পান করা। তবেই হয়তো সুস্থ, সুন্দর ও মেধাবী জাতি গড়ে উঠবে আমাদের। কারণ, নিরাপদ ও পুষ্টিযুক্ত খাবারই পারে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও মেধাবী করে গড়ে তুলতে।
তথ্যসূত্রঃ