সৌন্দর্যের অপরিহার্য অংশ চুল। চুল ছাড়া নিজেকে কল্পনা করা যায় না। আমরা কম বেশি সবাই চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত। তাই আমাদের চুল পড়ার কারন ও চুলের যত্ন সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকা দরকার। চুল পড়া রোধে সহজ ঘরোয়া সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।
চুল পড়ার কারণ
ছেলে মেয়ে উভয়েরই চুল পড়া সমস্যা হতে পারে। তাই আমাদের প্রথমেই জানতে হবে চুল কেন পড়ে।
- চুল পড়ার প্রধান কারন হল হরমোন জনিত। একে বলা হয় জেনেটিক এলোফেশীয়া ।
- আরেকটি অন্যতম কারন হিসেবে ধরা হয় ছত্রাক সংক্রমণ বা খুশকি।
- তাছাড়া ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে চুল পড়ে।
- এছাড়াও বিভিন্ন রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস বি, ও মানসিক দুশ্চিন্তার কারনেও চুল পড়ে।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
আমরা যদি একটু সচেতন হই তবেই আমরা চুল পড়া রোধে অনেকটাই সফল হব। নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে সহজেই চুল পড়া রোধ করতে পারব।
কখনই ভেজা চুল বেঁধে রাখা যাবে না। এতে ছত্রাক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চুল ভেজানোর পর ভালভাবে শুকিয়ে তারপর বাঁধতে হবে। চুলে যাতে কোন ভাবেই খুশকি হতে না পারে সেজন্য সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
১. মেথি ও নারিকেল তেলঃ
চুল পড়া রোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল মেথি ও নারিকেল তেল। মেথি ও নারিকেল তেল এক সাথে মিশিয়ে গরম করতে হবে। তারপর ঠাণ্ডা করে চুলের গোঁড়ায় ভাল ভাবে ম্যাসেজ করতে হবে । তিন ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। এ পদ্ধতি চুল পড়া বন্ধ করার পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করেবে।
২. ভাতের মাড়ঃ
আমাদের নিত্যদিনের প্রধান খাবার এবং অতি সহজল্ভ্য ভাতের মাড় দিয়ে চুল পড়া রধ ও চুলকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। ১.৫ কাপ ভাতের মাড় একটি বাটিতে নিতে হবে। তারপর তাতে তুলা ভিজিয়ে মাথার স্কাল্পে ভালভাবে লাগাতে হবে। ১ থেকে ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এতে খুশকি দূর হবে, চুল পড়ে রোধ হবে ও চুল হবে ঝলমলে। সপ্তাহে ২ দিন এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ভাতের মাড়ের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে চুলের আগায় ভালভাবে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিতে পারেন। এতে চুল দ্রূত বৃদ্ধি পাবে ও চুল পড়ে যাওয়া রোধ হবে।
৩. চা পাতাঃ
চা পাতায় রয়েছে ভিটামিন- ই, বি, সি যা চুলের জন্য খুবই দরকারি। চা পাতায় ক্যাফেইন থাকে, যা মাথার ত্বকের ইনফেকশন দূর করে। এছাড়াও চুলের রুক্ষতা দূর করতে, চুলের গোঁড়া মজবুত করতে, সাদা চুলকে কালো করতে চা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। ১ থেকে দেড় কাপ পানির মধ্যে ৩/৪ চামচ চা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ছেকে নিয়ে ১ চামচ লেবুর রস মেশাতে হবে। মিশ্রণটি ভালো করে চুলে ও মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। এরপর ৫-৭ মিনিট পর শ্যাম্পু করতে হবে। সপ্তাহে ৩/৪ দিন ব্যবহার করলে চুলের গোঁড়া যেমন শক্ত হবে তেমনি চুল হবে খুশকি মুক্ত ও সিল্কি।
৪. লেবু ও পেঁয়াজের রসঃ
লেবু চুলের যত্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা চুলের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
২/৩ চামচ লেবুর রস ও ২/৩ চামচ পেঁয়াজের রস একসাথে মিশিয়ে চুলে ও মাথার ত্বকে ভালো ভাবে লাগাতে হবে। বড় দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। তারপর শ্যাম্পু করতে হবে। এ পদ্ধতিতে আপনার চুল মজবুত হবে সাথে সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে।
৫. এলোভেরা, মেথি ও ক্যাস্টর অয়েলঃ
এলভেরা জেল, মেথি গুঁড়া, ও ক্যাস্টর অয়েল একসাথে পেস্ট করে চুলের গোঁড়ায় ভাল করে লাগেতে হবে । তারপর ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করতে হবে। এতে চুল পড়া যেমন রোধ হবে, তেমনি চুল হবে সিল্কি ও স্বাস্থ্যউজ্জ্বল।
এছাড়াও খানিকটা নারকেল তেল এর সাথে ২/৩ চামচ মেথি নিয়ে ফুটিয়ে বোতলে রেখে দিতে হবে। সপ্তাহে ২/৩ দিন চুলের গোঁড়া ও সারা চুলে ব্যবহার করে সারারাত রেখে পরদিন শ্যাম্পু করতে হবে। এতে চুল হবে সিল্কি এবং দূর হবে খুশকি।
ছেলেদের চুলের চুল পড়া বন্ধে করনীয়ঃ
চুল পড়ার সমস্যা শুধু মেয়েদের হয়, এমন নয়। ছেলেদেরও এ সমস্যা কম নয়। যেহেতু ছেলেদের বাইরে যেতে হয় বেশি তাই চুলে ধুলোবালি বেশি জমে, তাই ছেলেদের চুলের যত্ন একটু বেশি নিতে হবে।
- ছেলেরা বিভিন্ন ধরণের জেল ব্যবহার করে থাকেন। অনেকেই তার চুলের ধরণের সাথে কোনটা উপযুক্ত তা না জেনেই ব্যবহার করেন। যার ফলে চুল পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই চুলের ধরণ বুঝে জেল ব্যবহার করতে হবে।
- ধুলোবালির কারনে ছেলেদের চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সপ্তাহে অন্তত ৩/৪ দিন শ্যাম্পু করতে হবে।
- লেবু ও পেঁয়াজের রস একসাথে সপ্তাহে ২/৩ দিন ব্যবহার করলে খুশকি ও ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
- মেহেদি পাতা ও চা পাতা একসাথে পেস্ট করে ব্যবহার করলে চুলের গোঁড়া মজবুত হবে।
- তৈলাক্ত খাবার পরিহার করে ভিটামিন সি ও বি জাতীয় খাবার বেশি গ্রহন করতে হবে।
- ধূমপান পরিহার করতে হবে।
চুল পড়া বন্ধে খাদ্যাভ্যাস ও অন্যান্যঃ
- প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক দুশ্চিন্তা দূরে রাখতে হবে।
- নিয়মিত চুল আঁচড়াতে হবে, এতে চুলের গোড়া শক্ত হয়।
- বাইরে বের হলে ধুলোবালি থেকে চুলকে রক্ষা করতে চুল ঢেকে রাখা উচিত।
- শীতকালে হেয়ার ড্রায়ার না ব্যবহার করাই উত্তম। এতে চুল রুক্ষ হয়ে যায়।
পরিশেষে –
এই ব্যস্ততার যুগে যদি একটু সচেতন হই, একটু সময় নিজের জন্য ব্যয় করি, ঘরোয়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়েই আমরা আমাদের চুল ও নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারি।