অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল হল খেজুর। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিও রয়েছে এতে অনেক। এটিকে চিনির বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। এই ফল খাওয়ার সাথে সাথেই দেহের ক্লান্তিভাব দূর হয়। অবসাদ কমে শরীরে আসে প্রফুল্লতা। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ এই ফলে ভিটামিন বি ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।
খেজুরের পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা
খেজুরে ভিটামিন-বি ছাড়াও আরও আছে ক্যালরি, প্রোটিন। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং অন্যান্য আরও পুষ্টি উপাদান। এটি ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ একটি ফল। এ সকল উপাদান দেহের নানা প্রকার উপকার করে থাকে। প্রতি ৩০ গ্রাম বা ৪টি খেজুরে পুষ্টি উপাদান রয়েছে
উপাদান | পরিমাণ |
প্রোটিন | ১ গ্রাম |
ক্যালোরি | ৯০ |
ক্যালসিয়াম | ১৩ মি.লি. |
গ্রামফাইবার | ২.৮ গ্রাম |
আজওয়া খেজুরের উপকারিতা
একটি বিশেষ প্রজাতির খেজুর হলো আজওয়া খেজুর। এই প্রজাতিটি পবিত্র মক্কা নগরীতে উৎপন্ন হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের হাতে এর গাছ সর্বপ্রথম রোপণ করেন। এই প্রজাতির খেজুরে রয়েছে বিশেষ বরকত ও ফজিলত। এর সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন বিষ ও যাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না ‘
(বুখারি)
তিনি আরও বলেছিলেন এ খেজুর হল রোগ নিরাময়কারী ও এটি জান্নাতের ফল। এর মধ্যে রয়েছে বিষ নিরাময় গুণ।
এছাড়াও এই খেজুরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাও অনেক। নিচে এর সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
আজওয়া খেজুরে আছে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শর্করা, আমিষ, প্রোটিন, স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট। এছাড়াও রয়েছে খাদ্য আঁশ, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-কে। আরও আছে ক্যারোটিন, যা চোখের জন্য উপকারী। তাছাড়া আরও রয়েছে ফলেট, নিয়াসিন, থিয়ামিন ও রিবোফ্লেভিন এর মতো উপাদান যারা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই খেজুর দেহের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি দেহে শক্তি জোগায়। দিনের শুরুতে একটি খেজুর খাওয়া আপনার সারাদিনের কর্মক্ষমতা জোগাতে সক্ষম। রমজানের সময় সারাদিন রোজা রাখার শেষে এই ফল খেলে আপনার দেহ হয়ে উঠবে আবারও কর্মচঞ্চল ও প্রাণবন্ত।
মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা
শুকনো খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ ও উপকারী ভাবা হয় মরিয়ম খেজুরকে। এর নানা উপকারী গুণের জন্য মানুষের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়। রমজান মাসে রোজা রেখে দিনের শেষে এই খেজুর খেলে অনেক উপকার হয় শরীরের।
এই খেজুরে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, সি, কে ইত্যাদির মতো নানা উপকারী উপাদান। এ সকল উপাদান দেহের অনেক উপকার করে। এবার মরিয়ম খেজুরের উপকারিতা জেনে নিই।
- পেশী গঠনে সাহায্য করে।
- এতে থাকা ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
- রক্তশূন্যতা দূর করে।
- হৃৎপিন্ডকে সুস্থ রাখে।
- যাদের হৃৎপিণ্ড দুর্বল তারা এ খেজুর খেলে উপকার পাবেন।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- দেহের ক্লান্তি দূর করে।
খেজুর খওয়ার ফলে আপনার শরীরে যা ঘটে
শুধু আজওয়া বা মরিয়ম খেজুর খেলেই যে উপকার পাওয়া যায় এমন কিন্তু নয়। সকল প্রকার খেজুর থেকেই উপকার পাওয়া যায়। এটির সকল প্রকারেই রয়েছে অনেক পুষ্টি ও উপকারিতা। খেজুর খেলে যে সকল উপকারিতা পাওয়া যায় এবার সে সম্পর্কে জেনে নিই।
- খেজুরে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে সহজে কোনো রোগ আপনাকে আক্রমণ করতে পারবে না।
- এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই এটি দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার পেটকে অনেকক্ষণ ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে অন্য খাবার খেতে ইচ্ছে হয় না। এতে ওজন কমে। তাই ডায়েট চার্টে এই ফল রাখতেই পারেন।
- এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম। এই ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগের ঝুঁকি কমে।
- যারা চিনি খান না তাদের জন্য চিনির বিকল্প হতে পারে খেজুর। চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুরের রস বা খেজুরের গুড় খেতে পারেন। এতে চিনির চেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
- রক্তশূন্যতায় ভুগা রোগীর জন্য এটি হতে পারে এক দারুণ সমাধান। দেহে আয়রনের অভাব পূরণ করে রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে খেজুর। যেকোনো মানুষের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রনের প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে এই ফল
- এতে থাকা নানা উপাদান হৃৎপিন্ডের উপকার করে ও হৃৎস্পন্দন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে খেতে পারেন যেকোনো প্রজাতির খেজুর।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধান হিসেবে এটি বেশ উপকারী। রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে এটি খাওয়া ভালো যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে।
- এতে লিউটেন ও জিক্সাথিন নামক উপাদান থাকায় এটি চোখের রেটিনার উপকার করে।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
খেজুর একটি উপকারী ফল এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি৷ কিন্তু কখন বা কি নিয়মে খেলে বেশি উপকার পাবো?
সকালে খেজুর খেলে ভালো, এতে সারাদিন দেহে শক্তি পাওয়া যায় প্রচুর। ব্যায়াম করার কমপক্ষে আধা ঘন্টা আগে এটি খেলে দেহে সহজে ক্লান্তি আসে না, পাশাপাশি পেট থেকে দূষিত পদার্থও বেরিয়ে যায়।
আবার সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখেও খেতে পারেন এই ফল। সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও ঘুমানোর আগেও খেতে পারেন এটি। তবে ডায়রিয়া বা পেট খারাপের সমস্যা থাকলে এটি না খাওয়াই ভালো। এছাড়া হজমের সমস্যা থাকলেও এটি না খাওয়া উচিৎ।
খেজুরের অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অত্যন্ত উপকারী খেজুরের কি অপকারিতা আছে? আসলে সকল উপকারী জিনিসেরই কিছু না কিছু ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকে। খেজুরেরও তেমন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে। তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক এর না থাকলেও ডায়াবেটিস রোগীরা এই ফল খাওয়ার সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিৎ। এছাড়া যাদের দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি তারা এই ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
আরও জানতে চাইঃ
ডায়াবেটিস রোগীরা কি খেজুর খেতে পারবে?
ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ। এটি অন্য অনেক রোগের ঝুঁকিও তৈরি করে। তাই এটি নিয়ে মানুষের চিন্তার শেষ নেই। এ রোগের রোগীরা সাধারণত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার তেমন খেতে পারেন না। এ সকল খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে খেজুর হতে পারে একটি সমাধান।
খেজুর সাধারণত মিষ্টি ফল হলেও চিনির বিকল্প হিসেবে এটি খাওয়া যায়। বিভিন্ন গবেষণার মতে, এই ফল খেলে ব্লাড সুগার বাড়ে না। এই ফল বরং শরীরের উপকার করে। মিষ্টির বিকল্প হিসেবে এই ফল খেলেও ডায়াবেটিস রোগীদের ২-১টির বেশি খাওয়া উচিৎ নয়।
একটি নিরীক্ষার মতে, ১০ জন মানুষকে ১০০ গ্রাম খেজুর খাওয়ানোর পর চার সপ্তাহ পর তাদের দেহের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে ছিলো। পাশাপাশি তাদের দেহের কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে ছিলো।
তবে সকল ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কিন্তু এটি যে উপকারী এমন কিন্তু নয়। তাই এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই এই ফল খাওয়া উচিৎ।
পরিশেষে-
অত্যন্ত উপকারী একটি ফলের তালিকায় খেজুরের স্থান উপরের দিকেই হওয়া উচিৎ। এটি যেমন দেহের শক্তি জোগায়, তেমনি অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে।
এই ফল একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। নিয়মিত এটি খেতে পারলে দিনশেষে আপনার দেহেরই উপকার হবে। এতে করে আপনার পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হবে তেমনি অন্যান্য ঘাটতিও পূরণ হবে। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত খেজুর রাখুন। তাতে করে দেহের সুস্থতা বাড়বে ও কর্মক্ষমতাও ঠিক থাকবে।
অত্যন্ত মূল্যবান তথ্যাবলী সমূদ্ধ এই ‘স্বাস্থবিধি’।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।