কাশি বলতে গেলে আমাদের নিত্যদিনের সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে জ্বর, সর্দির পাশাপাশি কাশির সমস্যাও দেখা দেয়। খুসখুসে কাশি কিংবা শুকনো কাশি সহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা অনেক সময় অসহনীয় হয়ে উঠে। এই কাশি হলে আসলে কি করণীয় এ বিষয় নিয়েই আজ আলোচনা করবো আমরা।
কাশি হলে করনীয়
কাশি হলে শুধু ঔষধের উপর ভরসা না করে নিজে থেকে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা যায়। এ সকল ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে এ থেকে পেতে পারেন আরাম। আসুন জেনে নিই কি কি ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারি।
ক) আদা
কাশি হলে হাতের কাছে থাকা সবচেয়ে সহজ সমাধান হল আদা। আদা ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিয়ে অল্প লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন কিছুক্ষণ পর পর। এতে কাশি কমবে। পাশাপাশি চাইলে আদা দিয়ে রঙ চা খেতে পারেন। এতেও উপকার পাবেন।
খ) মধু
কাশির আরেকটি দারুণ ও সবচেয়ে কার্যকর ঔষধ বলা চলে মধুকে। মধু খেলে কাশি সহজে উপশম হয়। কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস ও আদা এবং তার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে পাবেন দারুণ উপকার। এটি খেলে কাশির সাথে গলাব্যথা থাকলে তাও কমাতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে কুসুম গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আবার চাইলে শুধু মধুও তিন বেল ১-২ চামচ করে খেলে এ থেকে উপশম পাওয়া যায়। আবার গরম পানির সাথে গোলমরিচের গুঁড়া ও মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
গ) তুলসী পাতা
কাশির বিরুদ্ধে প্রাচীন ও অন্যতম কার্যকর একটি উপায় হলো তুলসী পাতা। তুলসী পাতা খেলে খুব দ্রুতই কমে যাবে আপনার কাশি। এ ক্ষেত্রে তুলসী পাতা সরাসরি খাওয়ার চেয়ে এর রস খাওয়া বেশি ভালো। চাইলে এই রসের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
ঘ) বাসক পাতা
কাশি হলে প্রতিদিন সকালে বাসক পাতা সেদ্ধ করে সেই সেদ্ধ করা পানি ছেঁকে খেলে রোগ থেকে আরাম মিলে। পাশাপাশি চাইলে এ পাতার রসও খেতে পারেন। এতেও পাবেন উপকার।
ঙ) গরম দুধের সাথে হলুদ
গরম দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলেও কাশি থেকে উপকার পাওয়া যায়। তাই কাশি হলে কুসুম গরম দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খান। এতে আরাম পাবেন ও কাশিও কমবে।
এছাড়াও কাশি হলে লবঙ্গের রস কিংবা মেন্থল থেকে উৎপাদিত চকলেট খেলেও আরাম পাবেন। পাশাপাশি নিয়মিত কুসুম গরম পানিতে অল্প লবণ মিশিয়ে তিন বেল গার্গল করলে ও কুলি করলে খুব দ্রুতই কাশি থেকে মুক্তি মিলবে।
খুসখুসে কাশি হলে করনীয়
খুসখুসে কাশি একটি খুবই বিরক্তিকর সমস্যা। এ কাশি যেখানে-সেখানে, যখন-তখন শুরু হতে পারে এবং শুরু হলে তা সহজে থামে না। এমন না যে এ কাশি হলে জ্বর, সর্দি কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হয়। কোনো সমস্যা ছাড়াই এ ধরনের কাশি হতে পারে। এ ধরনের কাশি হলে এ যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে মুক্তি পেতে যা করতে পারেন:
- ধুলাবালি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। ধুলাবালি লাগলেই এ কাশি বাড়ে।
- ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দিন। ধূমপান এ ধরনের কাশির অন্যতম কারণ।
- এ রোগ ঠান্ডার সমস্যা থেকেও হতে পারে। তাই ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল না করে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।
- আদা দিয়ে চা খান বেশি বেশি। এছাড়াও মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- এছাড়াও কোনো ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণেও এ রোগ হতে পারে। তাই সর্বোপরি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
অতিরিক্ত কাশি হলে করনীয়
কাশি হতেই পারে। কিন্তু তা যদি অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায় তাহলে কিন্তু সমস্যা। অতিরিক্ত কাশি অনেক সময় বড় কোনো রোগের কারণ হতে পারে। তাই অতিরিক্ত কাশি হলে বা কাশি একদমই কমতে না থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। এছাড়াও আরও যা করতে পারেন:
- নিয়মিত মধু খেতে পারেন।
- তুলসী পাতার রস খান নিয়মিত।
- আদা ও মধু দিয়ে লিকার চা খান ২-৩ বেলা।
- কাশির সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো ওষুধ রোগী খায় কি না সে বিষয়ে খেয়াল রাখা।
- ধুলাবালি থেকে রোগীকে দূরে রাখা।
- ধূমপায়ী হলে ধূমপান ত্যাগ করা।
- অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ও সে অনুযায়ী বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া।
শুকনো কাশি হলে করনীয়
শুকনো কাশি হলে রোগীর গলায় কফ জমা হয় না। এটিও অনেকটা বিরক্তিকর কাশির ধরন। এ ধরনের কাশি হলে যা করবেন:
- বেশি পরিমাণে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পড়ুন – লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
- সকাল ঘুম থেকে উঠেই কুসুম গরম পানি দিয়ে গার্গল করবেন।
- আদা ও মধু দিয়ে লিকার চা খাবেন।
- লবঙ্গ, গোলমরিচের গুঁড়া ও আদা কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খান ও গার্গল করুন।
এ সকল নিয়ম মেনে চললে খুব দ্রুতই শুকনো কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এরপরও না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
সর্দি–কাশি হলে করনীয়
মৌসুম পরিবর্তন হতেই শুরু হয়ে যায় অনেকের সর্দি-কাশির সমস্যা। সর্দি-কাশি হলে কাশি, নাক বন্ধ হওয়া, বুকে শ্লেষ্মা জমা কিংবা গলায় খুসখুস করার মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যা করণীয়:
- পেঁয়াজের রস, মধু, আদা গরম জলের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন। এতে আরাম মিলবে।
- কুসুম গরম দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে আরাম পাবেন সর্দি-কাশি থেকে। চাইলে এর সাথেও মধুও মেশাতে পারেন।
- এ রোগের অন্যতম সহজ একটি সমাধান হল লবণ। লবণ বুকের শ্লেষ্মা বা কফ দূর করে। তাই এ রোগ হলে কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে উপকার পাওয়া যায়।
- এছাড়াও মধুর সাথে আদা মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার লিকার চা খেতে পারেন আদা ও মধু দিয়ে। পাশাপাশি আদা কুচি করে শুধু আদা খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় কাশি হলে করনীয়
গর্ভাবস্থায় কাশি হলে অনেকে ভয় পেয়ে যান। এ সময় খুব বেশি ওষুধ খেলে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হতে পারে ভাবে ওষুধও খান না অনেকে। তবে এ সময় কাশি হতেই পারে। এতে ভীত না হয়ে কিছু ঘরোয়া উপায়েই দূর করতে পারেন কাশি। আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কাশি হলে করনীয় কি।
- কাঁচা রসুন খেলে গর্ভাবস্থায় কাশি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। পাশাপাশি রসুন অন্য রোগের বিরুদ্ধেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
- গর্ভাবস্থায় কাশির সমস্যা দূর করতে আরেকটি দারুণ উপায় হলো আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া। এটি খেলে খুব দ্রুতই কমে যাবে কাশি।
- এছাড়া অন্য সাধারণ সময়ের মতোই গর্ভাবস্থায়ও মধু খেলে এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খান।
- কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করুন।
শিশুদের কাশি হলে করনীয়
বাচ্চা থেকে বড় সবারই কাশির সমস্যা হতে পারে। তবে শিশুদের কাশি হলে অনেকে চিন্তায় পড়ে যাবেন। তবে চিন্তায় না পড়ে নিম্নোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করুন।
- শিশুকে গরম পানি দিয়ে গার্গল করতে দিন কিছুক্ষণ পর পর।
- লেবুর রসের সাথে কুসুম গরম পানি ও মধু মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ান কিছুক্ষণ পর পর।
- শিশুকে কাঁচা হলুদের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ান।
- আদার সাথেও মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন কিংবা শুধু আদাও খাওয়াতে পারেন।
- শিশুদের কাশি হলে গরম স্যুপ খাওয়াতে পারেন। এতে শিশু আরাম পাবে।
- কুসুম গরম দুধের সাথে কাঁচা হলুদ খাওয়ান শিশুকে।
পরিশেষে-
কাশি হলে আসলে ভয়ের কিছু নেই। কাশি একটি সাধারণ সমস্যা। ঘরোয়া কিছু উপায় মেনে চললে খুব সহজেই এটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি বড় কোনো রোগের কারণেও হতে পারে। যদি এমন কোনো কিছু মনে হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোই শ্রেয়।
তথ্যসূত্রঃ
- https://www.medicalnewstoday.com/articles/322394
- https://www.webmd.com/cold-and-flu/cough-get-rid-home-hacks
- https://www.nhs.uk/conditions/cough/