আখের দেশি লাল চিনি কেন খাবেন


বিশেষজ্ঞদের মতে, ধীরে ধীরে খাবারে লবণ ও চিনির ব্যবহার কমাতে হবে। কিন্তু খাবারের স্বাদ আনতে এই দুটি বস্তুর ব্যবহার অপরিহার্য। বাদ দেয়া সহজ কথা নয়। আবার, ধবধবে সাদা চিনি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। চলুন আজকে জেনে নেই আখের দেশি লাল চিনি কেন খাবেন?

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, আপনাকে অবশ্যই দেশি লাল চিনি গ্রহণ করতেই হবে। সাদা চিনির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে চলুন প্রথমে জেনে নেয়া যাক।

সাদা চিনির ক্ষতিকর প্রভাবঃ

শিল্প-কারখানায় পরিশোধন করার সময় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়। আর এ প্রক্রিয়ায় চিনিতে যুক্ত করা হয় আরও ক্ষতিকর নানা উপাদান। ঝকঝকে সাদা বা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হয় সালফারের মত ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান।

তাছাড়া আমদানীকৃত চিনি তৈরিতে সবসময় আখ ব্যবহার করা হয় না। আখের বিকল্প উপাদান দিয়েও চিনি তৈরি হয় এবং মিষ্টতা আনতে বাড়তি রাসায়নিক মিশ্রিত করা হয়।

সাদা চিনির নামে যে চিনি আমরা প্রতিদিন গ্রহণ করছি তা আসলে সোডিয়াম সাইক্লামেট, হাড়ের গুড়ো, ফসফোরিক এসিড, বোনচারকোল, ডি-কালারিং এজেন্ট, রেজিসন ইত্যাদি ব্যবহার করে বানানো হয়।

বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা সাদা চিনি ও লবণের ব্যাপারে নিয়মিত সতর্ক করে যাচ্ছেন। তাই, ঝকঝকে সাদা চিনি নয়, আখের লালচে দেশি চিনি গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

লাল চিনির প্রকারভেদঃ

  • দানাদার লাল চিনি
  • আখের জুস পাউডার (ব্রাউন সুগার পাউডার)

ক) দানাদার লাল চিনি

আমাদের দেশীয় কারখানায় তৈরি আখের চিনি। এটি দেখতে লালচে, এর আর্দ্রতা একটু বেশি। অনেক সময় ক্রেতারা দেখতে সুন্দর না বলে এই চিনি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। কিন্তু দেশীয় চিনিকলে উৎপাদিত চিনি নিরাপদ এবং শিশু খাদ্য হিসেবে উপযোগী।

দানাদার লাল চিনি

খ) আখের জুস পাউডার

দেখতে পাউডারের মত বা আটার মত বলে অনেকেই আখের জুস পাউডার বলে থাকেন। আবার অনেকে লাল চিনিও বলে জানেন। এই চিনির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কৃষকের হাতে, গ্রামে প্রাচীন পদ্ধতি অবলম্বন করে। যার কারনে এর প্রাকৃতিক গুনাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।

লাল চিনির উপকারিতা কি কি?

দানাদার লাল চিনি বা আখের জুস পাউডার দুটোই হতে পারে সাদা ঝকঝকে চিনির বিকল্প। বাংলাদেশ খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় দেখা গেছে, আমদানিকৃত পরিশোধিত এবং দেশে উৎপাদিত পরিশোধিত ধবধবে সাদা চিনি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিচের টেবিলে একটি পরীক্ষার তুলনামূলক ফলাফলের আংশিক চিত্র তুলে ধরা হল –

বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ

 ক্যালসিয়ামপটাশিয়ামফসফরাসআয়রনম্যাগনেশিয়ামসোডিয়াম
লাল চিনি১৬০.৩২১৪২.৯১০.৭৯৬.০৩.৮৬০.৬
পরিশোধিত চিনি২.৬৫০.৩২২.৩৫.৪৭১.২১০.২

এতক্ষণ আমরা সাদা চিনি গ্রহনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানলাম। এবার লাল চিনি গ্রহনের উপকারিতা গুলো জেনে নেই –

লাল চিনির অনন্য স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে রয়েছে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি, ঠান্ডা প্রতিরোধ, জরায়ু সংক্রমণের চিকিৎসা, হজমের উন্নতি, পেট ফাঁপা কমাতে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করার ক্ষমতা। আসুন নীচে তাদের বিস্তারিত আলোচনা করি।

ক) মাসিকের অস্বস্তি উপশমে

লাল চিনি এবং আদা মিশ্রিত করে কুসুম গরম পানির সাথে খেলে মাসিকের অস্বস্তিকর ব্যাথা দূর হয়। চীনের প্রাচীন চিকিৎসায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়।

খ) হাঁপানি রোগীদের জন্য

গরম পানির সাথে লাল চিনি মিশিয়ে পান করলে হাঁপানির প্রদাহজনক লক্ষণগুলি দমন করা যায়। লাল চিনিতে অ্যান্টি-অ্যালার্জিক উপাদান রয়েছে যা হাঁপানি রোগীদের অসুস্থতার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।

গ) ওজন কমাতে

আপনি যদি ওজন কমানোর চেষ্টা করেন, তাহলে কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। লাল চিনিতে কম ক্যালোরি আছে, এবং এটি বিপাক প্রক্রিয়া ভাল করে তোলে। অতএব, এটি চিনি ত্যাগ না করেই ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ঘ) ত্বকের যত্নে

ভিটামিন বি -৬, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড এবং মিনারেল এর মত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট লাল চিনিতে পাওয়া যায় যা আপনাকে সুস্থ ত্বক পেতে এবং অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসাবে কাজ করতে সহায়তা করে। মরা চামড়া এবং ব্লক ছিদ্র দূর করতে ব্রাউন সুগার স্ক্রাব হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়াও, লাল চিনিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।

পরিশেষে –

দেশীয় আখ হতে কৃষকের দ্বারা বা দেশীয় কারখানায় উতপাদিত লাল চিনি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি তেমনি অর্থনীতির জন্যও উপকারি। নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে আমাদের সকলের উচিত লাল চিনি গ্রহণ করা।

রেফারেন্স –

আরও পড়তে পারেনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.